খুলছে পোশাক কারখানা, বাড়ছে করোনা রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২রা মে ২০২০ ০৩:২৩ অপরাহ্ন
খুলছে পোশাক কারখানা, বাড়ছে করোনা রোগী

সাভার উপজেলাতে গত চার দিন আগেও করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে ছিলো। কিন্তু পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়াতে হু হু করে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এক কথায় বলা চলে মনুষের মধ্যে এই ভাইরাসটিও সংক্রামণের বাড়তি সুযোগ পেয়েছে। 

কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যগত নিয়ম না মেনে জড়সড়ভাবে সামাজিক দুরত্ব না রেখে কারখানায় কাজ করাসহ প্রবেশ ও বের হওয়া এবং বার বার কারখানা চালু ও বন্ধ করার নাটকের কারণে সংক্রমণের হাড় বেরেই চলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১৪ দিন কঠিন সময়। তাই ভীষণ সতর্কতা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পার করতে হবে। যদি সেটা না হয় তাহলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু এবং রোগী দুটোই দেখা যাবে মে মাসে।

শনিবার (০২ এপ্রিল) সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে সূত্রে জানা গেছে, সাভারে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় ১৪ এপ্রিল। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক। এর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে একজন করে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৮ জন। কিন্তু গত দুই দিনে ৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ১৬ জনের শরীরের করোনার উপস্থিত পাওয়া যায়। ১৬ জনের প্রায় সবাই পোশাক শ্রমিক। এখন পর্যন্ত সাভারে ৪১৬ জনের পরীক্ষা করে ৩৪ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে। 

করোনার পাদুর্ভাব ঠেকাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা গত (৩০ এপ্রিল) সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর একটি চিঠিতে পোশাক কারখানা বন্ধের পাশাপাশি উপজেলার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করা অনুরোধ জানিয়েছেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, সাভারকে নিরাপদ রাখতে প্রথম থেকেই উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু কারখানা খোলার পর থেকে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সাভারে করোনা আক্রান্ত এমন রোগী আছে যার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ তাঁরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে সাভারে ঢুকেছেন এবং তথ্য গোপন রেখেছেন।

তিনি বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে পরীক্ষা করে কারখানায় প্রবেশ করাতে হবে। একজনও পরীক্ষার বাইরে থাকা মানেই ঝুঁকিতে থাকা। তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখে গ্রুপ ধরে কাজ করাতে হবে, নয়তো হবে না। শ্রমিক নেতারা বলছেন, সাভার-আশুলিয়া যে হারে পোশাক কারখানা খুলছে আর শ্রমিকেরা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামছেন তাতে এই এলাকায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সব কিছু লকডাউন, কোথাও কোন গণজমায়েত হতে দেওয়া হচ্ছেনা, হোটেল, মার্কেট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অথচ সব থেকে বেশী মানুষ এক সাথে কাজ করে গার্মেন্ট কারখানায়, এখানে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা সব থেকে বেশী অথচ স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই সকল শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। শ্রমিকরা চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছে, ইতিমধ্যে কিছু কারখানায় শ্রমিকদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এখনো সময় আছে হয় গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ করতে হবে অথবা কারখানা ভিত্তিক করোনা ভাইরাস পরিক্ষা করতে হবে এবং শ্রমিকদের জন্য কারখানার ভিতর থাকার যায়গা করে সেখান থেকে কাজে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে যে ক করেছে তা ১০০% মানতে হবে। তা না হলে আমরা সবাই দেখছি গার্মেন্ট কারখানা চালুর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী যেভাবে করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে সাভারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যদি শিল্পাঞ্চল গুলিতে এখনি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যথা যত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ঈদের আগেই বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব