বদলি নয় অভিযোগ পেলে বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩রা সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৭ অপরাহ্ন
বদলি নয় অভিযোগ পেলে বরখাস্ত

‘যে কোনো মূল্যে ভূমি অফিসগুলোতে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে সেবা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাও তাই।’ রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সাংবাদিকদের একথা বলেন। সেবা প্রার্থীরা মন্ত্রীকে পেয়ে ফাইল আটকে রেখে হয়রানি, ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন দেয়াসহ নানা অভিযোগ করেন। মন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে সবার অভিযোগ শুনেন। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে হয়রানির জবাব চান, সতর্ক করেন। জাবেদ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ পার্সেন্ট টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ শুনছি আমি। এলএ অফিসে হয়রানি একটি কমন প্র্যাকটিস হয়ে গেছে। সরকার বেতন দিচ্ছে না? তাদের আর কত টাকা প্রয়োজন? হারামের পয়সা খেয়ে লাভটা কী?

মন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাদের বদলি নয়, সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করা হবে।’ এলএ অফিসকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এলএ অফিসে কানুনগো, সার্ভেয়ার ও চেইনম্যানসহ অন্য পদের কর্মচারীরা যাতে ২ বছরের বেশি কর্মরত না থাকেন।’ ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি অফিসগুলোতে লোকজনকে হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) চালুর চিন্তা করছি। এ সেবা চালু হলে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে আর কোনো চেক দেয়া হবে না। ক্ষতিপূরণের অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেয়া হবে। গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা হওয়ার তথ্য নিজ মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত হবেন।’ তিনি বলেন, ‘ভূমি অফিসগুলোতে হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে আছি।’ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা পরিদর্শনে গেলেন জাবেদ। এর আগে প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও একাধিকবার এ অফিস পরিদর্শনে এসেছিলেন তিনি।

বাঁশখালী উপজেলার শিহাব উদ্দিন নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি-মালিক মন্ত্রীকে অভিযোগ করেন, এলএ অফিসে পরমেশ্বর চাকমা নামে এক সার্ভেয়ার তার ফাইল আটকে রেখেছেন। সেবা নিতে এসে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী পরমেশ্বর চাকমাকে ডেকে পাঠান। ফাইল আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রীকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে ফাইল দ্রুত ছেড়ে দেয়া হবে বলে মন্ত্রীকে জানান। এ সময় মন্ত্রী অভিযুক্ত সার্ভেয়ারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফাইল আটকে রাখার প্রবণতা কেন? মানুষকে ঘোরানো, হয়রানি করা- এসব কেন? আমরা তো মানুষের সেবা করতে চাচ্ছি।’ নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার আবদুল মোতালেব নামে এক সেবা প্রার্থী অভিযোগ করেন, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএ) বিদশী সম্বৌধি চাকমা ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে তাকে হয়রানি করছেন। ওই এলএ এ সময় মন্ত্রীকে বলেন, ‘স্যার আমি বাসায় ফাইল নিয়ে সারা রাত কাজ করি। মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করি।’ অভিযোগ শুনে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে এর আগেও অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ফাইল আটকে রেখে হয়রানি বাদ দিয়ে মানুষকে সেবা দিন। এরপরে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সময় জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন মন্ত্রীর সামনে এলএ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘৬টার পর এলএ অফিসে কোনো কাজ হবে না। বাসায় কোনো ফাইল নেয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলএ অফিসের বাইরের একটি চক্র ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে সমস্যা করছে। ওই চক্রকে ধরার জন্য চেষ্টা করছি। দুদককেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছি। অভিযোগ ওঠার পর গত সপ্তাহে ৪ জন সার্ভেয়ারকে এলএ অফিস থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।’

ইনিউজ ৭১/এম.আর