ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত ভূূঞাপুরেের কামার শিল্পীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: শনিবার ৩রা আগস্ট ২০১৯ ১০:৩৫ অপরাহ্ন
ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত ভূূঞাপুরেের কামার শিল্পীরা

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আযহা। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উৎসবের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। সময় ও দিন যতো ঘনিয়ে আসছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা ততই বেড়ে চলেছে। তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কোরবানির আনুসাঙ্গিক হাতিয়ার দা, বটি, চাপাটি, ছুরি ও চাকুসহ ধারালো অস্ত্র বানাতে দম ফেলার সময় নেই টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার কামার শিল্পীদের। জানা যায়, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদ সময়টাকে কামার শিল্পীদের কাজের চাপ অনেকটা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয়-রোজগারও। তাই ভোর সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সমান তালে টুং টাং শব্দে মুখর কামারের দোকানগুলো। পরিবারেরর ছেলে-মেয়েরা ও গৃহকর্মীরা তাদের কাছে সহযোগিতা করছে। ঈদের কয়েকদিন বাকি থাকলেও উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ইতিমধ্যে দা, বটি, চাপাটি, ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন ধরণের লোহার সামগ্রী বাজারে উঠেছে। তবে এখনও এসব জিনিস কেনার খুব একটা সারা নেই। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসবে এসব হাতিয়ারের বেচাকেনা তত বেড়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের আশা।

সরেজমিনে উপজেলার গোবিন্দাসী, নিকরাইল, শিয়ালকোল, বামনহাটা ও মাটিকাটা হাট ও বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির একটি ছরা ৩’শ ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫’শ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সাইজের চাকু ৩০ টাকা থেকে ১’শ টাকা, চাপাটি ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা, বটি ৩’শ ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার কয়েড়া গ্রামের নিতাই কামার বলেন, ঈদের আরো কয়েকদিন বাকী থাকলেও এখনও এসব হাতিয়ার কেনা খুব একটা জমে উঠেনি। জিনিসগুলো তাই ব্যবসায়ীরা পাইকারি কিনছেও না তেমন। পাইকারি ক্রেতা কম থাকায় কম লাভে জিনিসি বিক্রি করছি। তবে সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বেশি দামে এসব হাতিয়ার বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

গোবিন্দাসী বাজারের কামার শিল্পী নির্মল ও সাহেব আলী বলেন, সারাবছর যত লোহা সামগ্রী বিক্রি হয় এই ঈদেই বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ পশু জবাই করার জন্য ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন। আর পুরনো এইসব অস্ত্র অনেকেই রাখেন না। সেই জন্য প্রতিবছর নতুন নতুন অস্ত্রের প্রয়োজন পরে। এলাকার কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বললে তারা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। সরেজমিনে কামার শিল্পীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানী কয়লার অপ্রতুলতায় দাম বেড়ে গেছে, বেড়েছে লোহারও দাম। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে কামার শিল্পীরা আর্থিকভাবে পিঁছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছে।

সন্তানরা যেন এই পেশার সঙ্গেযুক্ত না হন সে জন্য অনেকে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। কথা হয় কামার শিল্পী আরো কয়েকজনের সাথে। তারা প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দেশে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এদের মধ্যে অনেকে বিদ্যুতের ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেন, কাজের চাপ বেশি থাকলেও বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ঠিক সময়ে কাজ করা যাচ্ছে না। যার কারণে রাত্রি বেলায় অনেক সময় চার্জার লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের দাবি, বর্তমানে নিরিবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সার্ভিস পেলে কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য সামগ্রী তৈরীতে ব্যাঘাত ঘটবে না। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা পেলে এই শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব