মা ইলিশ অভিযান-২০১৯ সমাপনান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৩রা নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৬ অপরাহ্ন
 মা ইলিশ অভিযান-২০১৯ সমাপনান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী ১৯৯৫ সালের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সরকারের দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ন উপকূলীয় এলাকা এবং অফুরন্ত সম্পদের আধাঁর আমাদের সামুদ্রিক জল সীমার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান, ডাকাতি দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় সব সময় নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর প্রতিটি সদস্য তার কার্যক্রম আরো বেগবান করার লক্ষ্যে বদ্ধ পরিকর এবং সে লক্ষ্য নিয়েই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিয়োজিত আছে।

আপনারা জানেন ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১ম অবস্থানে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিগত বছরের তুলনায় বর্তমানে মৎস্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদকে রক্ষা করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী, নৌ পুলিশ ও জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্বুদ্ধকরণ, প্রচলিত আইন প্রয়োগ, মৎস্যজীবীদের পুনর্র্বাসন/বিকল্প কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই “মা ইলিশ রক্ষা অভিযান - ২০১৯”। আপনারা সকলে জানেন যে আশ্বিন- কার্তিক মাসে মা ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে আসে ডিম ছাড়ার জন্য, এপ্রেক্ষিতে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশ মাছ নিধন প্রতিরোধের অভিযান এর লক্ষ্যে গত ০৯ অক্টোবর ২০১৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত “মা ইলিশ রক্ষা অভিযান- ২০১৯” ঘোষণা করা হয় এবং ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, মজুদ, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাত এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়।

ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে প্রায় ৭০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সহ সারা দেশে প্রধান/সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। এই প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশ মাছসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ জোনের আওতাধীন পরিচালিত ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র/সকল ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ এলাকার সীমানা গুলো ছিলঃ

ক। তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন হতে পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট।
খ। লক্ষীপুর জেলার কানিবগাচর সংলগ্ন মেঘনা নদী।
গ। ভোলার মদনপুর ইউনিয়নের নান্নু ডাক্তারের ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদী।
ঘ। দৌলতখান উপজেলার মাঝের চর সেলিম দালালের ঘাট সংলগ্ন এলাকা।
ঙ। রামগতির হাটের চর গজারিয়া এবং হাতিয়ার মৌলভীর চরের এলাকা।
চ। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় কালাইয়া বাজার এলাকা।
ছ। ভোলা জেলার লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা।
জ। কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালি পয়েন্ট।

“মা ইলিশ রক্ষা অভিযান -২০১৯” সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী একক ও যৌথভাবে সর্বমোট ২,৪০৪ টি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে সর্র্বমোট ১,২৯,৩১,১০০ মিটার কারেন্ট জাল, ৮২৬ পিস বেহুন্দী জাল, ৪১,২৬,১৬৫ মিটার চরঘেরা জাল, ১১৮ টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোট, চিংড়ি রেণু ২,২৩,৩২৫ পিস ও ২৯,৭৮৮ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে যার আনুমানিক মূল্য ৮১,৫৬,০৫,৬৫০ টাকা (একাশি কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ পাচঁ হাজার ছয়শত প াশ মাত্র)। উক্ত অভিযান চলাকালীন সময়ে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে নদীতে মাছ ধরার অপরাধে ৭৫৮ জন জেলেকে আটক করা হয় যার মধ্যে দক্ষিণ জোন কর্তৃক ৩৭৬ জন আটক করা হয়। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার করে বিভিন্ন মাত্রায় সাজা প্রদান করা হয় ।

“মা ইলিশ রক্ষা অভিযান -২০১৯” পরিচালনায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী দক্ষিণ জোনের অধিনস্থ সকল বেইস, জাহাজ, এইচপিবি, স্টেশান ও আউটপোস্ট সমূহে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয়ে বিশেষ টহল প্রদান করে। অত্র জোন কর্তৃক সর্বমোট ৬৪৫ টি একক ও যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। “মা ইলিশ রক্ষা অভিযান -২০১৯” শেষে শুধু মাত্র দক্ষিণ জোন কর্তৃক ৫৯,০৯,০০০ মিটার কারেন্ট জাল, ০৮ পিস বেহুন্দী জাল, ২৩,৯৮,৫০০ মিটার চরঘেরা জাল, ৭৫ টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোট ও ৮,৮৭৬ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয় যার আনুমানিক মূল্য ৩৩,০৪,৯৫,০০০/০০ টাকা। 

মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। উল্লেখ্য যে, দেশের প্রচলিত আইন মেনে ও সঠিক জাল ব্যবহার করে সঠিক উপায়ে মৎস্য সম্পদ আহরণ করলে দেশের মৎস্য সম্পদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে, যার সুফল জেলেরাই ভোগ করবে। সুতরাং, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী জেলেদের সাথে বন্ধু হিসেবে পাশে থাকতে চায়। মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযানে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের পাশপাশি ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সহযোগিতা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যা সকলের মধ্যে সচেতনতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে।

পরিশেষে আমি আপনাদের মাধ্যমে সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশে ইলিশের উৎপাদন ও রপ্তানিতে জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী সদা সক্রিয় থাকবে। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনী সদা জাগ্রত থাকবে এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

ইনিউজ ৭১/এম.আর