শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:১৬ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির মিলনমেলা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল পরিণত হয়েছে পাখির এক বিস্ময়কর রাজ্যে। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে এই বিলে এসে ভিড় করেছে বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখি। এ বছর ৩৮ প্রজাতির ৭৮৭০টি পাখি বিলে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। উল্লেখযোগ্য পাখিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন, সাদা বক, খয়রা কাস্তেচড়া, পাতিসরালি, পানকৌড়ি এবং বেগুনি কালেম। শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন।  


পর্যটকরা জানান, পাখির কিচিরমিচির আর নয়নাভিরাম দৃশ্য তাদের মুগ্ধ করেছে। বাইক্কা বিলের অন্যতম আকর্ষণ হলো পাখিদের ওড়াওড়ি এবং হাওরের শান্ত পরিবেশ। পর্যটকদের জন্য তৈরি করা ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পাখি দেখার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, এখানে পাখির নাম ও পরিচয় জানার জন্য রয়েছে একটি ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার।  


সরকার ২০০৩ সালে বাইক্কা বিলকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণ করে। বর্তমানে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের (সিএনআরএস) যৌথ ব্যবস্থাপনায় এটি পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাইক্কা বিল সংরক্ষণের জন্য পাঁচজন পাহারাদার নিয়োজিত থাকলেও বিশাল এলাকা তাদের জন্য সামলানো কষ্টসাধ্য। তারা বিলে টিকেটিং সিস্টেম চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বিলের রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক হবে।  


এ বছর বাইক্কা বিলে পাখি শুমারিতে দেখা গেছে ৭৫০টি মেটে মাথা টিটি, ৬৩৯টি কাস্তেচড়া এবং ১০০টি কালামাথা কাস্তেচড়া। এছাড়া প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছে পেরিগ্রিন ফ্যালকনের। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাখি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে, যা একে বিশ্বের দ্রুততম পাখি হিসেবে পরিচিত করে।  


বাইক্কা বিলে হাঁস জাতীয় পাখির আধিক্য থাকায় এটি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের প্রিয় শিকারস্থল। পাখি গণনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যরা জানিয়েছেন, পেরিগ্রিন ফ্যালকনের উপস্থিতি বাইক্কা বিলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উন্নতির প্রমাণ। পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থম্পসন গণমাধ্যমকে জানান, বাইক্কা বিলে এবার পাখির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং এটি পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।  


বাইক্কা বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় চড়ে হাওর ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ ওয়াচ টাওয়ারে বসে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন। পর্যটকরা বলছেন, প্রকৃতির এমন সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটানো সত্যিই হৃদয়গ্রাহী।  


স্থানীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, বাইক্কা বিল সুরক্ষার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, লোকবল বাড়ানো এবং উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যেতে হবে।  


বাইক্কা বিল পর্যটকদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণ হলেও এখানে পাখিদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন এবং স্থানীয়দের সমন্বয়ে এ বিলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।