সাংবাদিক ফাগুন হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শনিবার ২৯শে জুন ২০১৯ ০৯:০১ অপরাহ্ন
সাংবাদিক ফাগুন হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের হত্যাকারী চক্রকে শনাক্ত করে যথাযথ বিচারের আওতায় নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। সেসময় ফাগুনের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান বক্তারা। গত ২১ মে ঢাকা থেকে শেরপুরে বাড়িতে ফেরার সময় নিখোঁজ হন ফাগুন। পরদিন জামালপুর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ফাগুন হত্যার এক মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ হত্যা রহস্যের কোনও কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তবে তার খুনের নেপথ্যে তার পেশাগত অবস্থানের ভূমিকা থাকতে পারে বলে ধারণা তার বাবা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাকন রেজার। অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কম-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে সংবাদ লিখেছিল ফাগুন। সেই প্রতিবেদনের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্টরা তাকে খুন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

শনিবার মানববন্ধনে ফাগুনের বাবা কাকন রেজা বলেন, ‘আজকের মানববন্ধনে পিতা হিসেবে আমার পুত্রের জন্য বিচার চাইতে এখানে আমি আসিনি মূলত। এখানে আমি এসেছি শুধু ফাগুনের জন্য নয়, আমি এসেছি যে অন্যান্য ফাগুন আছে তাদের জন্যও। এক ফাগুন চলে গেছে, আমার ফাগুন চলে গেছে। এখন অন্যান্য যারা আছে, তার বয়সী যারা আছে, তারা যেন চলে না যায়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাকন রেজা আরও বলেন, কেন ফাগুনকে হত্যা করা হলো, কী তার অপরাধ ছিল তা অন্তত জানতে চান তিনি। ফাগুন হত্যার বিচার চেয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন ‘এটা শুধু পিতামাতার বেদনাই নয়, তাদের ভার নয়। আমরা যারা আত্মীয়, আমরা যারা স্বজন, আমরা যারা বন্ধু, আমরা যারা সাধারণ নাগরিক, আমি মনে করি এ ধরনের মৃত্যু, এ ধরনের নিঃশব্দ পরিস্থিতি সবার জন্য বেদনাদায়ক।’

ফাগুন তেজগাঁও কলেজের টুরিজ্যম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি প্রিয় ডটকমের ইংরেজি বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। পরীক্ষা শেষে কলেজ ছুটি থাকায় তিনি শেরপুরে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ২১মে, মঙ্গলবার জাগোনিউজ২৪ ডটকমে যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসেন। কথাবার্তা শেষে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ যোগাযোগ হয়, এরপর তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

রাতে বাসায় না ফিরলে ভোরেই ফাগুনের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তার বাবা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাপ্তাহিক শেরপুরের সম্পাদক কাকন রেজা। ২২ মে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিনি গাজীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুরের সব থানা ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও যখন ফাগুনের কোনো হদিস পাচ্ছিলেন না, তখন জানা যায়, জামালপুরে এক তরুণের মরদেহ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে সেটিই ফাগুনের মরদেহ বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। রেল পুলিশ জানায়, ২১ মে মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে রাত পৌনে ১টার দিকে ফাগুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জামালপুর রেলওয়ে থানায় ফাগুনের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাগুনের বাবা কাকন রেজা বলেছিলেন, ‘‘প্রিয় ডটকমের ইংরেজি বিভাগে কাজ করত ফাগুন৷ মাঝে মধ্যে বাংলায়ও রিপোর্ট লিখত, যদিও তার পদবী ছিল সহ-সম্পাদক৷ কিছুদিন আগে একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে সংবাদ লিখেছিল ফাগুন৷ ওই সংবাদের পর ডেভেলপার কোম্পানি তাকে হুমকি দিয়েছিল৷ এমনকি আপোষের প্রস্তাবও দিয়েছিল৷ফাগুনকে নেপাল ভ্রমণের খরচ ও একটি আইফোন টেন কিনে দিতে চাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ফাগুন সেই প্রস্তাবে রাজি হননি৷ পরে প্রিয় ডটকম কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়৷ সেখানে ডেভেলপার কোম্পানির এমডি এসে ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷ এমনিতে ফাগুনের কোনো শত্রু ছিল না৷ তবে আমার নিজের সাংবাদিকতার কারণে কেউ আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলেকে হত্যা করে থাকতে পারে৷ কারণ, পারিবারিক কোনো শত্রুতাও ছিল না আমার পরিবারে৷’’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব