রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা এক দরিদ্র নারী মঙ্গলবার ফুটপাতে বাচ্চা প্রসব করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। নবজাতক শিশু ও তার মা গুরুতর অসুস্থ রয়েছেন। জানা গেছে, উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়ার দরিদ্র মাছ ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীর গর্ভবতী স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৫) সোমবার সন্ধ্যার দিকে তার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা উঠলে পরিবারের লোকজন তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। রাতে চিকিৎসা চললেও সকাল ১০টার দিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস চন্দ্র মণ্ডল আলেয়া বেগমের অবস্থা জটিল বলে এবং এখানে গাইনি ডাক্তার না থাকায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিন্তু ফরিদপুরে যাওয়ার মতো আর্থিক সংগতি না থাকায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন অভিভাবকরা গোয়ালন্দ পৌরসভার জুড়ান মোল্লারপাড়া এলাকায় কথিত এক পাগলের দরবারে নিয়ে যায়। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়ে। ওই গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সুরাইয়া আক্তার জানান, ওই মহিলার অবস্থা বেগতিক দেখে গ্রামের আসমা খাতুন, মাজেদা বেগম, তানিয়া আক্তার, আশা আক্তার, চায়না আক্তারসহ কয়েকজন এগিয়ে যান। তাদের সহায়তায় পথের ধারেই আলেয়া একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার অবস্থা খারাপ হলে সন্ধ্যার দিকে পুনরায় গোয়ালন্দ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয় বলে শুনেছি। এ দিকে এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে বেরনোর মাত্র আধাঘণ্টা পর তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই আলেয়া বেগম ফুটপাতে বাচ্চা প্রসব করল। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করলে সেখানেই তার বাচ্চা হতে পারত। গাইনি ডাক্তার না থাকার অজুহাতে এভাবে স্বাভাবিক প্রসূতিদেরও হাসপাতাল থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। আলেয়া বেগমের স্বামী আইয়ুব আলী বলেন, আমি গরিব মানুষ। সোমবার সন্ধ্যার পরে আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে আসি। সঙ্গে আমার শাশুড়ি দৌলতী বেগম ছিলেন। সকালে তাদেরকে রেফার্ড করা ও পাগলের দরবারে যাওয়ার ব্যাপারটি আমি পরে শুনেছি। আমার স্ত্রী ও নবজাতক শিশু খুবই অসুস্থ। তাদের সুচিকিৎসার জন্য আমার তেমন সামর্থ্য নেই। গোয়ালন্দ হাসপাতালের আবাসিক ডা. তাপস চন্দ্র মণ্ডল জানান, ওই মহিলার পানি ভেঙে পেটে প্রচণ্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয়। আমরা তার কিছু পরীক্ষা করাতে চাইলেও তারা রাজি হচ্ছিল না। পরে সকালে তাদের আগ্রহেই ফরিদপুর মেডিকেলে রেফার্ড করি। তাছাড়া আমাদের এখানে গাইনি সার্জন নেই। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার পর তারা কোথায় গেলেন তা আমার জানা নেই।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।