মাত্র কয়েক বছর আগেও কলাপাড়া উপজেলার গ্রামের জনপদে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোরোসিন খরচের ভয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত মানুষ। পড়তে পারতনা ছেলে-মেয়েরা। ফলে রাত আটটার পরে জনপদের পর জনপদে নেমে আসত শুনসান নীরবতা। তবে এখন আর চোখে পরেনা এসব দৃৃশ্য। এখন যেখানেই চোখ যায় সবদিকেই গভীর রাত অবধি আলোর ঝলকানি। ছেলে-মেয়েরা গভীর রাত অবধি পড়ছে। গ্রামের বাজার গুলোয় গভীর রাত অবধি মানুষের কোলাহলসহ পদচারনায় মুখরিত থাকছে। উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়ার গ্রামে গ্রামে এখন আলোর ঝলকানি। এখন আর সোলার প্যানেলের আলোর প্রয়োজন হয়না। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত এসব গ্রামের বাড়ির হেরিকেন এবং কুপি এখন কেবলই প্রর্দশনী হিসাবে ঝুলছে বেড়ায়। গ্রামীন জনপদের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলোর এমন ঝলকানিতে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। গ্রামে গ্রামে যেন আলোর বিপ্লব ঘটেছে। অনেকের বাড়ীতে চলছে টেলিভিশন। লেগেছে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সংযোগ। জানছেন দেশ-বিদেশের প্রতি মুহুর্তের সর্বশেষ সংবাদসহ বিনোদন দুনিয়ার খবর। যা তাদের জীবনযাত্রাকে অমুল পাল্টে দিচ্ছে। বিদ্যুতের এমন সুবিধায় এখন সড়কে চলছে ইজিবাইক। কেউ গড়েছেন মুরগির খামার। ফাস্টফুডের দোকান। গড়ে উঠেছে ক্লিনিক, বরফ কল, স্বমিল, রাইসমিল। এতে গ্রামের পর গ্রামে বানিজ্যিক সম্প্রসারন বিস্তৃত হয়েছে। কর্মসংস্থান ঘটেছে হাজারো মানুষের। রাতের আলোয় চলছে পাঠদান, খেলাধুলা। ডাবলুগজ্ঞের সবুজ জানান, আগে বেকার ঘুরতাম। বিদ্যুৎ আসার পর ইজি বাইক কিনে চালিয়ে বাবাকে বাড়তি উর্পাযন দিয়ে সহায়তা করছি। সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে।
চায়ের দোকানদার রহমান জানান, তিন বছর আগে বিদ্যুৎ পেয়েছেন। আগে সাতটা পর্যন্ত দোকান করতেন। এখন মধ্য রাত পর্যন্ত বেচা কেনা হয়। এতে আয়ও বেড়েছে তার। গৃহবধূ মাহমুদা জানান, তিন বছর ধরে হেরিকেন ধরাতে হচ্ছেনা। এখন বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত ঘর। সারাদিনের কাজ শেষ করে সন্তানেদের লেখাপড়া করান। এরপরে তাদের নিয়ে টিভি দেখেন। চম্পাপুর ইউপির সাবেক সদস্য কামাল মৃধা জানান, আগে খবর শুনতাম। এখন দেখি। পাকা রাস্তায় ইজিবাইক চলছে। বাবলাতলা বাজরের ব্যবসায়ী মাসুদ তালুকদার বলেন, চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে হয়না। বিদ্যুত আসার পর গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। সপ্তাহে একদিন এমবিবিএস চিকিৎসক আসে। কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার ১৪টি ইউনিয়নের শতকরা সত্তুর ভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়েছে। বাকী গ্রামের আশি ভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন টানার কাজ জুনেই সম্পন্ন হবে এবং সংযোগও পাবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ২৪৭টি গ্রামের শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ সমাপ্ত হবে। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক ইউসুফ বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ভিশন বাস্তবায়নে আরইবি চেয়ারম্যান মহোদয়ের কঠোর র্নিদেশনায় সমিতি গুলো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোন হয়রানী ছাড়াই নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য (পটুয়াখালী-৪) অধ্যক্ষ মুহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলশভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। তাই সরকার গঠনের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। একের পর এক মেঘা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেণ। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিচ্ছেন। এমনকি দ্বীপ উপজেলা রাংগাবালীকে বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য যে সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমান করার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী দেখছেন। এর মাধ্যমেই তা বাস্তবায়িত হবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।