কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন রক্ষায় নির্মান হচ্ছে গ্রীন-সী-ওয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাকিবুল ইসলাম তনু, জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: সোমবার ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:৩৯ অপরাহ্ন
কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন রক্ষায় নির্মান হচ্ছে গ্রীন-সী-ওয়াল

বিশ্বের বিরলতম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার ভাঙন রোধে সৈকত রক্ষা প্রকল্পের আওতায় তৈরী হচ্ছে গ্রীন-সী-ওয়াল। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুইশ ১২ কোটি টাকা। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ৫ কিলোমিটার সৈকত এলাকা নিয়ে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে নিয়ে সরকারের এমন মহা পরিকল্পনায় আশ্বান্বিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারী, স্থানীয়সহ পর্যটকরা।  পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেল সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অব্যাহত বালু ক্ষয়ের ফলে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার ভাঙন রোধে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং পূর্ব দিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার মোট পাঁচ কিলোমিটার গ্রীন-সী-ওয়াল নির্মান করা হচ্ছে। এতে শোড় লাইন বরাবর ইস্থির থাকবে। সী-ওয়াল উপড়ে ঘাস জন্মাবে। সী-ওয়ালের উপর দিয়ে পর্যটকরা হাটা চলা করতে পারবে। বসে বিশ্রাম নিতে পারবে। যা পর্যটকদের জন্য দৃষ্টি নন্দন হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে। বিগত দশ বছরে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সৈকত সংলগ্ন ইকোপার্ক, ঝাউবাগান, নারিকেল বাগনসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কয়েক হাজার গাছপালা সমুদ্রতট ক্ষয়ের সাথে বিলীন হয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী ফার্মস এন্ড ফার্মস এর নারিকেকল বাগানের শেষ স্মৃতি চিহ্ন টিনশেড বাংলোটি পর্যন্ত সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরিবাধ। এতে চরম ঝুকির মধ্যে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীসহ কুয়াকাটা পৌরসভা ও লতাচাপলী ইউনিয়নের জীবন ও সম্পদ। সৈকতের এমন অব্যাহত ভাঙন রক্ষায় ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। কিন্তু কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এবার সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মান করছে গ্রীন-সী-ওয়াল। 

সী-ওয়ালের স্থান ভেদে ২১ মিটার প্রস্থ এবং দুই থেকে আড়াই মিটার উচু হবে। উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডব ঠেকাতে সামনের দিকে নির্দিষ্ট এলাইনমেন্ট বরাবর সাগরের অন্তত তিন মিটার গভীর তলদেশে জিও টিউব ব্যাগ বসানো হবে। এতে পলি জমে বিচের প্রশস্ত আরো বাড়বে। জিওটিউব ব্যাগটি এমন ভাবে বসানো হবে যাতে এটি জোয়ারের সময় পানির নিচে ডুবে থাকে। ফলে জিও টিউবের উপর দিয়ে খুব সহজেই নৌকাসহ সকল জলযান চলাচল করতে পারবে, নোঙর করতে পারবে বেলাভ‚মে। দুই থেকে আড়াই মিটার টপে প্রশস্ত থাকবে তিন মিটার, নিচে প্রস্থ থাকবে ১৪ মিটার। এদিককে সী-ওয়াল নির্মানের সংবাদে বিনিয়োগকারী, স্থানীয়সহ পর্যটকদের মনে নেমে এসছে স্বস্তি। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি শাহআলম হাওলাদার জানান, প্রকল্পটি কুয়াকাটার উন্নয়নে এক মাইল ফলক তৈরী করবে। এর ফলে তরান্বিত হবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বাড়বে বহুমাত্রিক বিনিয়োগ।  পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বেলাভ‚মির ক্ষয় রোধে প্রকল্পটি গ্রহন করেছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সৈকতের ভাঙন রোধ হবে। পাশাপাশি পূর্বের প্রসস্ততাও ফিরে আসবে। দৃষ্টি নন্দন ও পরিবেশ বান্ধব এ গ্রীন-সী-ওয়ালে বসে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের সৌন্দর্য। স্থানীয় সংসদ সদস্য (পটুয়াখালী-০৪) অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটাকে হৃদয়ে লালন করেন। তার ভালবাসার এ কুয়াকাটার উন্নয়নে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারই প্রমান এ গ্রীন-সী-ওয়াল। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব