প্রকাশ: ৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪৪
আমরা জন্মের পর দেখেছি আমাদের বাপ দাদাদের রোপন করা ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে খেজুর গাছ ছিল অন্যতম। আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনতাম শীতকালের জন্য। কারণ শীত আসলেই খেজুরের রস ও খেজুরের মিঠা (রাভ মিঠা) গন্ধে গ্রামীন জনপদ মৌ মৌ করতো। শীত আসলেই গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো খেজুর গাছ রসের উপযোগী করতে পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত হতে। এতে গাছিরা এই সময় অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হতো। কালের বিবর্তনে অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা করতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনেক গাছের মত খেজুর গাছকে ও কেটে ফেলে লাগালো হয়েছে কাঠের গাছ । একসময় গ্রামীণ উপজেলাগুলোতে অধিকাংশ রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে ও কৃষিজমির পাশে ছিল প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ। শীত মৌসুম শুরু হতেই গাছীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ত খেজুরের রস সংগ্রহ করার কাজে। সেই রসের চাহিদাও ছিল প্রচুর।
ফলে বিভিন্ন পিঠা, পুলি ও পায়েস সহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম উপাদান। এ জন্য গাছীদের চাহিদার কথা বলে রাখতে হতো। ফলে যাদের খেজুর গাছ ছিল না তারাও রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুমতি ও বিনা অনুতিতে শত শত ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটাগুলোর বেশির ভাগই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, খেজুর গাছের দহন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মীরসরাই উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। এতে করে খেজুরগাছ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের ঘড়ি মার্কেট এলাকার গাছি জসিম উদ্দিন জানান, ইটভাটাগুলোতে প্রধানত খেজুরগাছ পোড়ানো হচ্ছে। আবার অনেকে খেজুরগাছ কেটে সাঁকোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে গাছ কমে যাওয়াতে তারা খেজুরের রসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরেক গাছি সাইদুল ইসলাম জানান, শীত আসলে আমার পরিবার চলতো খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির টাকায়। এখন গাছ না থাকায় আমি সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন মীরসরাই হাট গুলোতে ও গুড় পাওয়া যায় না।এই বিষয়ে মায়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী জানান, আমরা এই ব্যাপারে সচেতন ভবিষ্যৎতে পরিবেশ বান্ধব এই সব গাছ কাটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবো যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে।এই বিষয়ে দুর্গাপুরের খেজুর রস চাষী আনোয়ারুল হক নিজামী বলেন আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় প্রচার মাধ্যম রেডিও, টেলিভিশনে পরিবেশ বান্ধব গাছ ফলজ বনজ এবং ওষুধি গাছ লাগানো ও সন্ত্রাসী গাছ লাগাতে নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি। পুরোনো অনেক মানুষের স্বপ্ন আবার ও হারিয়ে যেতে বসা পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছে বরে উঠবে গ্রামীন জনপথ গুলো।