প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৯
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাধীনতা অর্জনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা স্বীকার করলেও তাকে জাতির পিতা বলতে রাজি নন। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন, যা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন। স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান ও ত্যাগ স্বীকার করলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সংঘটিত নানা জাতীয় বিপর্যয়ের জন্য তার দায় রয়েছে। তার শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতের করদ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, ১৯৭২ সালের সংবিধান জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং শুরু হয় লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা ও একদলীয় বাকশালের স্বৈরশাসনের ভিত্তি রচনা।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা। এই রাজনৈতিক মূর্তিপূজা জনগণকে দমন, দেশ লুট এবং নাগরিকদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল সমগ্র জনগণের সংগ্রাম হলেও আওয়ামী লীগ দশকের পর দশক বাংলাদেশকে বংশগত সম্পত্তি মনে করে শাসন করেছে এবং জবাবদিহিতাহীনভাবে ক্ষমতা ভোগ করেছে।
নাহিদ ইসলাম আরও লেখেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এই জমিদারি ভেঙে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আর কখনো কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা মতবাদ জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না কিংবা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিতে পারবে না। তার মতে, ‘জাতির পিতা’ উপাধি কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয়, বরং আওয়ামী লীগের তৈরি একটি ফ্যাসিবাদী হাতিয়ার।
তার ভাষ্যে, মুজিববাদ হচ্ছে শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামে পরিচালিত এক ফ্যাসিবাদী মতবাদ। এর অর্থ গুম, হত্যা, ধর্ষণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতীয় সম্পদ লুট ও বিদেশে পাচার। এর মধ্যে রয়েছে ইসলামভীতি, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু ভূমি দখল এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিদেশি শক্তির কাছে বিক্রি করা।
নাহিদ অভিযোগ করেন, ষোলো বছর ধরে মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখা হয়েছে একটি অস্ত্র হিসেবে, আর তার মূর্তির আড়ালে চলেছে অপহরণ, খুন, লুটপাট ও গণহত্যা। তার মতে, মুজিববাদ এখনও এক জীবন্ত বিপদ যা পরাজিত করতে হবে রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের মাধ্যমে।
তিনি আহ্বান জানান একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার যেখানে কোনো দল, বংশ বা নেতা জনগণের ঊর্ধ্বে নয়। তার দাবি, বাংলাদেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, বরং জনগণের প্রজাতন্ত্র।