গোয়ালন্দে উত্তেজনা মিটিয়ে বিদায় নিলেন বিতর্কিত ইমাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা-রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৪৮ অপরাহ্ন
গোয়ালন্দে উত্তেজনা মিটিয়ে বিদায় নিলেন বিতর্কিত ইমাম

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সম্প্রতি তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থী ও জুবায়ের পন্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় এবং স্থানীয় গুণী ব্যক্তিদের মধ্যস্ততায় অবশেষে এই উত্তেজনা শান্তিপূর্ণভাবে নিরসন হয়েছে। 


ঘটনাটি শুরু হয় গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আদর্শ গ্রাম জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রেজাউল করিমের বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে। তিনি সাদপন্থী তাবলীগ জামায়াতের অনুসারী হলেও তার বক্তব্য সম্প্রতি বিতর্কের জন্ম দেয়। বিশেষ করে ১৮ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সাদপন্থীদের হামলার পর থেকে তার বক্তব্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। 


এ পরিস্থিতিতে, এলাকায় জুবায়ের পন্থী মুসুল্লিরা তার অপসারণের দাবিতে সোচ্চার হন। একাধিক আলোচনার পরেও উত্তেজনা কমছিল না এবং গোয়ালন্দে সাধারণ জনগণ ও মুসুল্লিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম সম্প্রতি উদ্যোগ নেন। তিনি এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে যান এবং এক পর্যায়ে তিনি উভয় পক্ষকে একত্রিত করার উদ্যোগ নেন।


২৪ জানুয়ারি শুক্রবার, জুম্মার নামাজের পর উভয় পক্ষের প্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়। ওসি রাকিবুল ইসলাম, গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মন্ডল, বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাসান মন্ডল এবং মসজিদ কমিটির সদস্যরা এতে অংশ নেন। উক্ত সমঝোতায়, মাওলানা রেজাউল করিম নিজেই ইমামতি থেকে অব্যাহতি নেন এবং মসজিদে নতুন ইমাম নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 


এ সময়, বিদায়ী ইমাম মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, “এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমি ইমামতি থেকে পদত্যাগ করছি।” তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সাল থেকে তিনি এই মসজিদে ইমামতি করে আসছেন এবং তার সময়ে মসজিদের উন্নয়ন ও দ্বীন প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। 


এলাকার সাধারণ মুসুল্লিরা এবং উভয় পক্ষের আলেমরা এই সমঝোতার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা আশা করছেন যে, ভবিষ্যতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি না হবে। 


অপরদিকে, বিদায়ী ইমামকে সম্মান জানিয়ে মসজিদ কমিটি তাকে নগদ ৩০ হাজার টাকা উপহার হিসেবে প্রদান করে। নতুন ইমাম নামাজ পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলে একমত হন। 


গোয়ালন্দের এই ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যে শান্তি ও ঐক্যের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমঝোতা এবং উভয় পক্ষের সহমতপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। 


এই সমঝোতা শুধু গোয়ালন্দের স্থানীয় মসজিদ ও মুসুল্লিদের জন্যই নয়, বরং দেশের অন্যান্য এলাকায়ও একটি বার্তা পাঠাচ্ছে যে, ধর্মীয় বিভাজন এবং উত্তেজনা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব।