অর্থ সংকটে বাকিতে চামড়া কিনছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৮ই জুন ২০২৪ ০৬:০০ অপরাহ্ন
অর্থ সংকটে বাকিতে চামড়া কিনছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা

নগদ অর্থের অভাবে বরিশালে সবপশুর চামড়ার দাম বাকিতে পরিশোধ করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে কয়েক কোটি টাকা আটকা রয়েছে ট্যানারী মালিকদের কাছে। তাই এবছর তারা অপেক্ষাকৃত কম চামড়া সংগ্রহ করেছেন।


সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আযহার জামাতের পর কোরবানি শুরু হয়। সারা দিন চামড়া সংগ্রহের পর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় আড়ত বা ট্যানারিতে।


হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সভাপতি বাচ্চু মিয়া বলেন, ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে বছরের পর বছর ধরে আমাদের বরিশালের আড়তদারদের কয়েক কোটি টাকা আটকা। তারপরও যারা এ ব্যবসা কোনোভাবে টিকে আছি, সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কোরবানির কিছুদিন আগে কয়েক লাখ টাকা দিয়েছে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা, যা দিয়ে পশুর বড় ধরনের চামড়ার মজুদ করা সম্ভব না। তাই এবারে নিজের এলাকার একটি মাদরাসার সংগ্রহকৃত পশুর চামড়া ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছি না।   তারা নগদ টাকা চায়। এখন যারা চামড়া নিয়ে আসছেন, তাদের সবাইকে সব টাকাও দিতে পারছি না, কিছু বাকিতেও রাখছি।


তিনি বলেন, চামড়া শুধু রাখলেই হয় না, পরিষ্কার করে সেটিকে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। আর সেই লবণের দামও কোরবানির আগেই বস্তা প্রতি বেড়েছে।


সরকারের হস্তক্ষেপে গতবারের চেয়ে চামড়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেনা থেকে শুরু করে শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতে আকার ভেদে গড়ে হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এখন আমরা কি দাম পাবো সেটা বলতে পারছি না, আবার সংরক্ষণ করা সব চামড়ার যে দর পাবো তাও বলতে পারছি না। এটা নির্ভর করবে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের ওপর। সরকারের উদ্যোগ ভালো, তবে তার একার পক্ষে সবকিছু সামলানো সম্ভব নয়। সবাইকে মিলে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে চামড়া শিল্প ভালো হয়।


যদিও মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীরা বলছেন, যেটুকু বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে তা ২০ থেকে ৫০ টাকার বেশি নয়। আর বরিশালে অল্প ব্যবসায়ী মাঠে থাকায় বাজারও যাচাই করা যাচ্ছে না।


বরিশাল নগরে এবার ৩-৪ জন ও জেলা মিলিয়ে ৫-৬ জনের বেশি চামড়া সংগ্রহ করছেন না বলে জানিয়েছেন পদ্মাবতী এলাকার ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মাসুম। তিনি বলেন, আগে ১০-১৫ জন এ ব্যবসায় জড়িত ছিল। ঢাকার ট্যানারির কাছে টাকা আটকে যাওয়ার পর এখন ৩-৪ জন নগরে এবং গোটা জেলা মিলিয়ে ৫-৬ জন চামড়া সংগ্রহ করেন। আর আমি তো ব্যবসা নয়, পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এটা করছি। কোরবানির আগে ট্যানারি মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। আর এ টাকা দিয়ে যে কয়েক পিস চামড়া হবে তাই কিনবো। বাকি বাট্টার ঝামেলায় যাব না।


তিনি বলেন, বরিশালের বাজারে ২০-৩০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে পশুর চামড়া পাওয়া যায়। যেখানে মান ও আকার ভেদে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায় কিনছি। যা গতবারের থেকে তুলনামূলক বেশি। আর এ চামড়া সংরক্ষণে এভারেজে ৪০০ টাকার বেশি খরচ হবে। লবণসহ সংরক্ষণ ও পরিবহনের কারণে আমাদের খরচ বাড়লেও ট্যানারি কি দেবে সেটার ওপর নির্ভর করবে লাভ লোকসান। আবার সংরক্ষণ করা চামড়ার মধ্যে এই গরমে না হলেও ১৫ শতাংশ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যবসা এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বলা যায়।


প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারে বরিশাল জেলায় লাখের ওপর পশু কোরবানি হবে। হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ ৫০-৬০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন। বাকিটা জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করতে পারবে।