গুলশান-২ এর ৭৪ নম্বর রোডের ৫ নম্বর ভবনটি হোটেল প্যারাডাইজ। সুউচ্চ এই ভবনেই ঢুকলো সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযানে যাওয়া দলটি। সকাল তখন সাড়ে ১০টার কিছু বেশি, অভ্যর্থনা কক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কিছুটা বাগবিতণ্ডা শেষে সোজা ১৪ তলায় পৌঁছালো সিটি করপোরেশনের টিম। দলনেতা ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।
সঙ্গে আছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, মশক নিধন কর্মীসহ অন্যান্যরা। সেই সঙ্গে ড্রোন হাতে দুইজন অপারেটর।
বিশাল ছাদে সেখানে স্থাপন করা আছে হেলিপ্যাড। সেই হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়েই গুলশানের আকাশে উড়ানো হলো ড্রোন। ড্রোন অপারেটরের হাতে থাকা কন্ট্রোলের পাশাপাশি ডিসপ্লেতে তখন সবার চোখ। গুলশানের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে তখন আশপাশের ছাদগুলোতে খোঁজা হচ্ছে মশার উৎপত্তিস্থল। পাশেই খাতা-কলম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে টিমের অন্য এক সদস্য। এ খাতাতেই মশার উৎপত্তির অস্তিত্ব আছে- এমন ভবনের তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
ড্রোনের মাধ্যমে মশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে। তিনি বলেন, আমাদের মশক নিধন কর্মীদের যদি বলি তোমরা ছাদে উঠে উঠে মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করো, তাহলে তারা দুই, চার বা সর্বোচ্চ ১০টি বাড়ি দেখবে। আবার অনেক বাড়িতে ঢুকতে দেয় না তাদের। কিন্তু একটি উঁচু ভবনে যখন আমরা উঠে ড্রোন দিয়ে দেখছি, তখন আশপাশের শত শত বাড়ি কিন্তু আমরা একঘণ্টার মধ্যে দেখে ফেলতে পারছি। এতে করে যেমন কাজ সহজ হয়েছে, তেমনি দ্রুততার সাথে মশার উৎপত্তিস্থল ছাদও কিন্তু আমরা চিহ্নিত করে ফেলছি। সেই সঙ্গে তাৎক্ষণিক সেই ভবনে গিয়ে আমরা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি। মূলত এই কারণেই আমরা মশক নিধন কর্যক্রম বেগবান করতেই আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ড্রোন নিয়ে একেকটি ভবনে যাচ্ছি, আশপাশের শত শত ভবনের ছাদ দেখছি, তখন অন্য ভবন মালিকরাও কিন্তু সচেতন হয়ে যাচ্ছে। অভিযানে দণ্ডিত যেন তারা না হয়, সে কারণে নিজেরাই তাদের ভবনের ছাদ পরিষ্কার রাখছে। মূলত এটাই আমাদের দরকার, সবাই সচেতন হলে মশক নিধন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া থেকে আমরা নগরবাসীকে রক্ষা করতে পারব।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরা সেক্টর-৪ এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস শনাক্তকরণ কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ২ থেকে ১১ জুলাই ঢাকা উত্তরের আওতাধীন প্রতিটি বাসা-বাড়িতে অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎস খুঁজতে আমরা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব। সিটি করপোরেশন ড্রোন থেকে ছবি নিয়ে এবং তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যায় তার একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে, যা আগামী বছরও মশক নিধন কার্যক্রমে কাজে লাগবে।
সে সময় তিনি আরও বলেন, নগরের প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করে ছাদ বা বেলকনিতে মশার উৎস খুঁজে বের করা কঠিন এবং এটি অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়ির ছাদে এডিসের লার্ভা আছে কি না, তা খুঁজে বের করা হবে এবং পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।