প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা বিদেশিনীদের তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণসহ নানা সংস্কার ও ভেদাভেদ ভুলে শুধু প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন অনেক বিদেশি তরুণী। ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে। এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ভিনদেশী ছেলে-মেয়ের সাথে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর কেমন কাটছে তাদের দিন তা অনেকের কাছেই অজানা। জানতেও চায় না কেউ।
২০১৭ সালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর বাজারে সিলভা-সঞ্জয় দম্পত্তির বাড়ীতে আসা ব্রাজিলের সাওপাউলোর থেকে ছুটে আসা তরুণী। সঞ্জয়ের বাড়ীতে গিয়ে কথা হয় সঞ্জয়ের বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে। এদের সাথে কথা বলে জানা যায় সিলভা-সঞ্জয় দম্পতির বর্তমান পরিণতি।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির উপজেলার জামালপুর বাজারের মিষ্টির দোকানী বলাই ঘোষের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার সঞ্জয় ঘোষের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেম হয় ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবি ২৯ বছর বয়সী জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভারের সাথে। দীর্ঘ দেড় বছর প্রেম করার পর তারা সিদ্ধান্ত নেন সারা জীবন থাকবেন একসাথে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল শনিবার ব্রাজিল থেকে রওয়ানা হয়ে সোমবার (৩ এপ্রিল, ২০১৭) রাত সাড়ে ৯ টায় ঢাকায় আসেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী সিলভা।
বিমানবন্দরে সিলভাকে বরণ করে নিতে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন প্রেমিক সঞ্জয় ঘোষ। সিলভাকে নিয়ে সঞ্জয় চলে আসেন তার নিজ বাড়ী জামালপুরে। পরের দিন মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল, ২০১৭) সকাল থেকেই ব্রাজিল কন্যার প্রেমের টানে ছুঁটে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার বিভিন্ন নারী-পুরুষ তাকে এক নজর দেখতে সঞ্জয়ের বাড়ীতে ভীড় জমায়। পরে সিলভা ও সঞ্জয় নিরাপত্তার জন্য বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম রকিব হায়দারের কাছে আবেদন করলে থানা পুলিশ তাদের নিরাপত্তা জোড়দার করেন।
প্রেমিক সঞ্জয়ের বাড়িতে একদিন থাকার পরই বুধবার (৫ এপ্রিল, ২০১৭) তারা চলে যান ঢাকাতে। পরের দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল, ২০১৭) রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় সঞ্জয় ঘোষের জনৈক এক দাদার বাসায় রাতে তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের বিষয়টি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী সরদার ও প্রতিবেশীরা। তবে বিয়ের বিষয় সম্পর্কে সঞ্জয় ও তার পরিবার কথা বলতে অপরাগতা স্বীকার করেছিলেন।
৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ১০ এপ্রিল (সোমবার) ঢাকা ছেড়ে ব্রাজিলে পাড়ি জমান জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা। এরপর থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। সিলভা ব্রাজিলে ফিরে তার সেই ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেন। এমনকি যে সিম ব্যবহার করতো সেই সিমও বন্ধ করে রাখেন। ফলে সঞ্জয়ের ইচ্ছা থাকা শর্তেও সিলভার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি। বিয়ের পর তাদের সংসার জীবন মাত্র ৪ দিনের। এখন পুরোটাই বিচ্ছিন্ন তাদের যোগাযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সঞ্জয়ের এক আত্নীয় ও এলাকার প্রতিবেশীরা বলেন, সিলভা নামের ব্রাজিলিয়ান যে তরুণী এসেছিলেন তিনি সঞ্জয়কে ভালোবেসেই এসেছিলেন এবং তাদের বিয়ে হয়েছিল এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কয়েকদিন থাকার পর সিলভা দেশে ফিরে গিয়ে সঞ্জয়ের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেননি। কেন রাখেননি তা বলতে পারবোনা। তবে আমাদের ধারণা এসব মেয়েরা লোভী প্রকৃতির একটি চক্র। ওরা বিভিন্ন দেশের ধনীর ছেলে-মেয়েদের টার্গেট করে। টার্গেট মিস হলে ওরা আবার নিজ দেশে ফিরে যায়। সঞ্জয়ের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে।
সঞ্জয় ঘোষ বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে আর কোন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হোক সেটা আমি চাচ্ছিনা। সিলভা আমার শুধু একজন ভালো বন্ধু ছিল। এর বাইরে কিছুই না। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনে সিলভা এদেশে আসার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। সিলভা ব্রাজিলে চলে যাওয়ার পর তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয় বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সিলভার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আর কোন যোগাযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সঞ্জয়ের বাবা-মা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তিনি একটি কথা বলেন সিলভা ব্রাজিলে চলে যাওয়ার পর আর তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।
সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যাক্ষ আঃ হালিম তালুকদার বলেন, সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে যে সব সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার কোন ভিত্তি নেই। এখানে আবেগ আর মিথ্যার উপস্থিতি পরিমাণ-ই বেশি। আবেগ আর মিথ্যার উপর নির্ভর করে কোন বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা টিকে না। আমাদের দেশের বাঙালিরা বেশিরভাগই সংস্কৃতি ও পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে খাপখাইয়ে নিতে পারে না। যার কারণে অল্পদিনেই বিবাহ বিচ্ছেদ বা বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।
তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যেও অনেক লোভ লালসা কাজ করে। আমরা বাঙালিরা ভাবি বিদেশীদের সাথে আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলে অনেক অর্থসহ বিদেশে যাওয়া যাবে। সাধারণত এই লোভের কারনেই তারা অনেক বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যখন একটি বিদেশী ছেলে বা বিদেশী মেয়ে এসে বাঙালি একটি মেয়ে বা ছেলেকে বিয়ে করে কিছুদিন সংসার করে আবার বিদেশে ফেরত চলে যায় তখন সমাজে মেয়ে বা ছেলের পরিবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সম্মানহানি হয়। সেজন্য সবার উচিত ফেইসবুকের মাধ্যমে কারো সাথে গভীর সম্পর্ক না গড়ে তোলা এবং বিয়ের মতো একটি বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।