টিফিনের টাকায় কেনা ফ্লাক্স-ই আয়ের উৎস !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা, জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: সোমবার ১৯শে জুলাই ২০২১ ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
টিফিনের টাকায় কেনা ফ্লাক্স-ই আয়ের উৎস !

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। কথাটি সত্য। তবে কারো  কারো জন্যও নয়। যারা তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না, স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেনি, সংসারের ঘানি নিয়ে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করছে। মায়ের একটি নতুন শাড়ি, ছোট ভাইয়ের ঈদের পোশাক, অসুস্থ্য বাবার ঔষুধ কেনার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছে। তাদের জন্য কি, ঈদ মানে আনন্দ? ঈদ মানে খুশি? 




আসাদ শেখ (১১)। রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া কেকেএস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ। 





ঘরে বসে সময় কাঁটে। বাবা লালন শেখ। করোনা কালীন কর্ম হারিয়ে ঘরে বসে রয়েছে। দীর্ঘদিন আয়-রোজগান বন্ধ। ধার দেনা করে সংসার চলে। অসুস্থ্য শরীর। প্রতিনিয়ত ঔষুধ কিনতে হয়। তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। 





আসাদের খেয়ে না খেয়ে আর কয় দিন চলে। তাই ঘরে রাখা টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে কিনে নেয় একটি চায়ের ফ্লাক্স। সকাল-সন্ধ্যায় চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। চা বিক্রি করে মায়ের হাতে তুলে দেয় আয়ের টাকা। 




অসুস্থ্য বাবার ঔষুধ। চা বিক্রি শুরু করেছেন প্রায় ৬মাস হলো। চা বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হয় দেড় থেকে ২শত টাকা। আসাদের আয়ের টাকায় সংসার কিছুটা ভাল চলে। 




রবিবার বেলা ১২ টার দিকে দৌলতদিয়া ট্রাক টার্মিনালে দেখা হয় তার সাথে। খোলা একটি জায়গায় কয়েকজন লোক বসা দেখে মুখ ভরা হাসি নিয়ে এগিয়ে এসে বলে স্যার চা দিব। উপস্থিত সবাই ব্যস্ত তাই আসাদের কথা কেউ শুনেছে, কেউ শুনেনি। 





এসময় মুখটি মলিন হয়ে গেল। আসাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে উপস্থিত ৬ জনের সকলের চা দেওয়া কথা বললে নিমিষেই আসাদের মুখে হাসি ফিরে আসে। আনন্দের সাথে সকলের হাতে এক কাপ করে চা তুলে দেন। 






পাশে বসিয়ে কথা বলতে চাইলে মনের আনন্দের বলতে লাগলেন। স্যার আমি  ক্লাস ৫ম শ্রেণীতে পড়ি। বাবা লালন শেখ হকারী করে। তবে করোনার কারণে এখন কাজ নেই। তাই ঘরে বসে থাকে। শরীরটাও ভাল না। 





আসাদ আরও বলে, বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে চায়ের ফ্লাক্স কিনি। সেই দিন থেকে প্রতিদিন দুই বেলা, সকাল-সন্ধ্যা চা বিক্রি করি। প্রথমে বাবা জানতো না। এখন জানে। 





দুই ফ্লাক্স চা বিক্রি করলে কয় টাকা লাভ হয়। হাসি দিয়ে বলে স্যার প্রতি ফ্লাক্সে ১১০/২০ টাকা লাভ হয়। দুই ফ্লাক্সে ২৩০/৪০ টাকা লাভ হয়। আমি টাকাগুলো খরচ করি না। মায়ের হাতে দেই। 






তোমার এই টাকা দিয়ে কি করে তোমার মা? এমন প্রশ্নে আসাদ বলে চাউল ও বাজার করে। এই টাকা এখন আমাদের সংসার চলে। তবে ঈদের মধ্যে সারাদিন চা বিক্রি করি। ৪/৫ ফ্লাক্স চা বিক্রি করা যায়। লাভ বেশি হচ্ছে। দুই দিন যাবৎ ৪/৫শত টাকা লাভ হয়। 




এই টাকা দিয়ে তুমি কি করবে এমন প্রশ্নে আসাদ বলে, কেন স্যার? ঈদে মায়ের জন্য নতুন শাড়ী। ছোট ভাইয়ের নতুন জামা। সিমাই, চিনি ও বাবার জন্য জন্য একটি নতুন লুঙ্গি। তোমার জন্য কিছু কিনবে না। 





"স্যার এত টাকা কোথায় পাব ? এসময় পাশে বসে থাকা বিআইডব্লিউটিসি কর্মরত রাজু হাউলাদার আসাদের কথা শুনে ৫শত টাকা দিয়ে বলেন বাবা তুমি একটি নতুন জামা কিনে নিও। 






আসাদ টাকা নিয়ে অঝড়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল আর কোন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে। উপস্থিত সকলে আসাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল নিরব ভাষায়।




আসাদের ব্যাপারে কথা হয় দৌলতদিয়া কর্মজীবি কল্যাণ সংস্থা কেকেএস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরি রাণী’র সাথে, তিনি বলেন, আসাদ ভাল ছাত্র। স্কুল চলাকালীন প্রতিদিন স্কুলে আসতো। তবে স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক দিন যাবৎ তার যোগাযোগ নেই।