প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৪
জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা মামলার ট্রাইব্যুনালে আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে এই সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়, যার অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার জানিয়েছেন, গত ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে তার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভেতর নিয়ে আসে এবং শরীর থেকে তখনো রক্ত পড়ছিল। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, পেটে গুলি লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে, ভুঁড়ি বের হয়ে রক্ত পড়া থামছিল না।
অপর সাক্ষী শহীদ আহম্মেদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনেছেন। এদিন শহীদ ইয়াকুবের চাচা নাজিমুদ্দিন রোডের শহীদ আহম্মেদ ও শহীদ ইসমামুল হকের ভাই চট্টগ্রামের মহিবুল হক সাক্ষ্য প্রদান করেন। ইয়াকুব নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিলেন এবং নাজিমুদ্দিন রোডের শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের পাশে মিলি গলির বাসিন্দা ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেন। মামলায় আটজন আসামি রয়েছে, যার মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক। গ্রেফতার রয়েছে শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, সাদ্দাম হোসেন এবং রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী কুতুব উদ্দিন আহমেদ শুনানি পরিচালনা করেন।
মা রহিমা জানান, ছেলে ৫ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথমে তাকে সুস্থ বলে জানানো হয়, পরে জানা যায় যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বিভিন্ন মিডিয়ায় ভিডিও দেখে নিশ্চিত হন, হত্যাকারীরা পুলিশের পোশাক পরিহিত ছিলেন।
রহিমা ও মহিবুল ট্রাইব্যুনালকে জানান, তারা ইসমামুলের লাশ চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দাফন করেন। তারা হত্যাকারী ও নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
সাক্ষীদের বিবৃতি অনুসারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ কয়েকজন নির্দেশদাতা ছিলেন। ভাইয়ের হত্যাকারী ও নির্দেশদাতাদের বিচার করার দাবি করেছেন মহিবুল।