অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক-মাষ্টারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ঝালকাঠীতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১০ অপরাহ্ন
অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক-মাষ্টারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ঝালকাঠীতে মামলা

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি ও নিখোঁজের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। ঢাকার ডেমরা থানাধীন পূর্ব বক্সনগর এলাকার বাসিন্দা ও বালু ব্যবসায়ী মনির হোসেন ঝালকাঠির সদর থানায় লঞ্চের মালিক, চালকসহ ৮ জনকে নামধারী ও অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেছেন। আজ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ৩০৪ ধারায় মামলাটি গ্রহন করা হয়েছে।


মামলায় নামধারী আসামীরা হলেন, মেসার্স আল আরাফ এন্ড কোং ও এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, লঞ্চের মাষ্টার মোঃ রিয়াজ সিকদার, মোঃ খলিল, লঞ্চের ড্রাইভার মোঃ মাছুম,কালাম, লঞ্চের সুপারভাইজার মোঃ আনোয়ার, লঞ্চের সুকানী আহসান ও কেরানী মোঃ কামরুল।


মামলার এজাহারে বাদী মনির হোসেন উল্লেখ করেন, তার বোন তাসলিমা আক্তার (৩০) ও তার দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৫), সুমনা আক্তার তানিসা (১০) এবং ছোট ভাই জনির ছেলে জোনায়েদ ইসলাম বায়জিদ (৭) গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনায় তার স্বামী সুমন সরদারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। বাদী তাদের ঢাকার সদরঘাটে ওই লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান। ওই দিন রাত ৩ টা ১০ মিনিটের দিকে বোন তাসলিমা তাকে ফোন দিয়ে জানান, ৩ টা ৫ মিনিটের দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটি পৌছালে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ হয়ে আগুন লেগে যায়। পরে ইঞ্জিন রুমের আগুন গোটা লঞ্চে ছড়িয়ে পরে।


 এসময় তার বোন বলেন, “আমরা মনে হয় আর বাঁচবো না”। এরপর থেকে বাদী তার বোনের মোবাইলে কল দিলেও সেটি বন্ধ পান। এরপর তিনি তার ছোট ভাই জনি ও বেয়াই আকাশকে নিয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ২৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ৯ টার দিকে পৌছে তিনি ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধা নদী তীরে রাখা এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে কাজ করতে দেখেন। সেসময় মুলত আহত-নিহতদের উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিলেন তারা।


মামলায় আরো উল্লেখ করেন, তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তার বোন, দুই ভাগনী ও ভাতিজাকে খুজঁতে থাকেন কিন্তু ব্যর্থ হন। ওইসময় উদ্ধার হওয়া ৩৬ টি মরদেহের মধ্যেও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেন বাদী। তবে ১২ টি মরদেহ সনাক্তের যোগ্য ছিলো বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেন।


এরপর তিনি জীবিত যাত্রী ও উপস্থিত লোকদের মাধ্যমে জানতে পারেন, লঞ্চটি ঢাকার থেকে যাত্রা শুরুর আগেই কিছু যাত্রী ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পেয়ে স্টাফদের বললে, তারা ইঞ্জিনে ত্রুটি আছে জানালেও কোন সমস্যা হবে না বলে মত প্রকাশ করেন। এরপর লঞ্চটি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে বরগুনার দিকে অগ্রসর হলে রাত ৩ টা ৫ মিনিটে বিকট শব্দে ইঞ্জিন রুমে আগুন লেগে যায়। এতে একটি ইঞ্জিন বিকল হলেও অপর ইঞ্জিন সচল থাকায় যাত্রীরা লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে বলেন। তবে বারবার অনুরোধেও লঞ্চটিকে স্টাফরা তীরে না ভিড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।


তবে কিছু সময় পরে গোটা লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পরে এবং লঞ্চটি ভাসতে ভাসতে দিয়াকুল এলাকায় এসে পৌছে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে থেমে যায়। যাত্রীরা আগুন থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাপ দেয়। লঞ্চ থেকে ছাপিয়ে পড়ে এবং আগুনে পুড়ে আনুমানিক ১৯০/২০০ যাত্রী আহত এবং তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। তবে এখন পর্যন্ত বাদীর বোন, দুই ভাগনী ও ভাতিজা নিঁখোজ রয়েছেন বলে মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন।


এদিকে আজ সকাল দুটি মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এমভি অভিযান-১০ ট্রাজিডিতে এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।