প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২০
দুই বান্ধবী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হয়েছে। সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।এর পর পরিবারের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিবারের ৭ সদস্য কারাগারে আসেন আজিজ ও কালুর লাশ নিতে। এ সময় তাদের দুজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল।
ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজুল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। দুজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। রাতেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুই আসামি আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে আজিজ (৫০) ও মিন্টু ওরফে কালু (৫০)। আসামিদের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পছন্দের খাবারও খাওয়ানো হয়।
কারা সূত্রে জানা গেছে, দুই খুনির ফাঁসি কার্যকরে রাতে একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, সিভিল সার্জন দিলীপ শেখ আবু শাহীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। রাত ১০টা ৪৫মিনিটে প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ফাঁসি কার্যকরে পাঁচ জল্লাদ কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন, আজিজুর রহমান ও কাদের অংশ নেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কারা কর্তৃপক্ষ। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, গত শনিবার (২ অক্টোবর) দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সাথে শেষবারের মতো দেখা করে গেছেন।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে আজিজ এবং মিন্টু ওরফে কালু ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার রায়লক্ষীপুর গ্রামের দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরে এ ঘটনায় ২০০৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মামলা হয়।
এ মামলায় চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই আসামি আজিজুল ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।
পরে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন। চলতি বছরের ২৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্টেও একই রায় বহাল রাখেন। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়।