কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা সাংসদ ও ইউএনওরা !

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে ডিসেম্বর ২০২১ ১১:২৫ অপরাহ্ন
কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা সাংসদ ও ইউএনওরা !

সাংসদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কারণে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না। স্থানীয় সরকারের কাজে সাংসদেরা হস্তক্ষেপ করেন এবং ইউএনওরা জনপ্রতিনিধিদের মতো ভূমিকা পালন করেন।


 আজ রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের জাতীয় কনভেনশনে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। কার্যকর স্থানীয় সরকার জাতীয় কনভেশন ২০২১–এ অংশ নেন জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জনপ্রতিনিধিরা। এতে সারা দেশ থেকে স্থানীয় সরকারের কয়েক শ জনপ্রতিনিধি অংশ নেন।


এ সময় বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনসুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো সাংসদ। তিনি উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হওয়ায় পরিষদ স্বাধীন নয়। উপজেলা পরিষদ যত দিন স্বাধীন না হবে, তত দিন কাজে অনেক অসুবিধা থেকে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার সম্পূর্ণ স্বাধীন হলে চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন।


মনসুর রহমান খান বলেন, স্থানীয় সরকারের সাংসদদের কারণে অনেক দুর্নীতি হয়। এ জন্য সাংসদের আইন প্রণয়নে নিয়োজিত থাকার দাবি জানান তিনি।


পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী রহমান বলেন, ইউএনওকে ‘মহোদয়’ বলতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘এসি ল্যান্ডকেও স্যার বললে মনে হয় তিনি খুশি হবেন। সব জায়গায় আমাদের নাম ওসিরও নিচে থাকে।’


মৌসুমী রহমান বলেন, ‘আমার উপজেলার যিনি ইউএনও আছেন, মনে হয় তিনিই একজন জনপ্রতিনিধি। কম্বল বা সরকারি ত্রাণ আসলে তিনি গাড়িতে করে দিয়ে দেন। আমরা জানিও না কী আসল, কী দেওয়া হলো, কাকে দেওয়া হলো। আমরা জানতে চাইলে বলা হয়, দেওয়া হয়ে গেছে।’


কনভেনশনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকারকে যত বেশি কার্যকর করা যাবে, তত বেশি জনগণের কল্যাণ সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সরকারকাঠামো আছে, কিন্তু তার মধ্যে কিছু দুর্বলতাও আছে। তবে আমলাতন্ত্রকে অস্বীকার করা যাবে না। তাই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সহাবস্থান করতে হবে। পরস্পরের প্রতি সম্মান রাখতে হবে।’


এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তারা বেশি ক্ষমতাবান হয়ে যাচ্ছেন। এ সমস্যা কেন হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে সমাধান করা প্রয়োজন।


গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটা কাঠামো থাকা দরকার। সেই কাঠামোতে একটা সংকট আছে। তাতে কিছু মানুষ অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়, অপরদিকে কিছু মানুষ শক্তিশালী হতে পারে না। কাঠামো ঠিক করলে সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।


এ সময় স্থানীয় সরকারের নারী জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে মানসিকতা পরিবর্তনের দাবি জানান ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার নারী কাউন্সিলর দিলরুবা রেজা। তিনি বলেন, ‘সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। অথচ পুরুষ কাউন্সিলররা বলেন নারীদের এখানে কাজ কী? প্রতিদিন আপনারা আসেন কেন—এ রকম কথা বলেন তাঁরা।’


দিলরুবা রেজা অভিযোগ করে বলেন, ‘সব মানুষের প্রয়োজনে পাশে থাকি, পুরুষ কাউন্সিলরের চেয়ে বেশি কাজ করি। কিন্তু বরাদ্দের সময় বলা হয় আপনাদের জন্য বরাদ্দ নেই। এডিপি বা যেকোনো বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমাদের সমান পরিমাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় না।’ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের জন্য কতটুকু বরাদ্দ করা হবে, সে বিষয়ে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।


এ সময় গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান বলেন, ‘আমাদেরকে বলা হচ্ছে নিজেদের আয়ে চলার জন্য। অথচ স্থানীয় সরকারের নিজস্ব ভূমি থেকে যে রাজস্ব আয় হয়, তার প্রায় ৮০ ভাগই চলে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।’


মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, পৌরসভাকে আরও কার্যকর করার জন্য এখানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ করতে হবে।


উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিষদ এখনো অনেকটাই অকার্যকর। এটাকে আরও কার্যকর করতে হবে।


মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, স্থানীয় সরকার কার্যকরে সরকারের আগ্রহ থাকলেও এখনো তা ভালোভাবে কার্যকর করা যাচ্ছে না।