ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহি এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চ যাত্রীরা। গত আটদিনে এসব রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাঁপ পূর্বের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ রুটে চলাচলকরা বিলাসবহুল এমভি সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ঘাট ম্যানেজার হানিফ হাওলাদার, এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ একাধিক লঞ্চের স্টাফরা।
এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আশরাফ বলেন, অভিযান-১০ লঞ্চের দুর্ঘটনার পর প্রায় প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে আমরা দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। ওই লঞ্চের কেবিনের যাত্রী মমতাজ বেগম বলেন, বাধ্য হয়ে লঞ্চে চড়তে হয়। দুর্ঘটনার পর অনেকটা ভীতি নিয়েই রওয়ানা হয়েছি। ডেকের যাত্রী হালিম শেখ বলেন, লঞ্চের যেখানে লাইফ বয়া রয়েছে তার নিচে জায়গা নিয়েছি।
অপর যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাসে ঢাকা যেতে অনেক খরচ, তাই ভয়ের মধ্যেই আল্লাহতায়ালার উপর ভরসা করে লঞ্চেই উঠেছি। একাধিক যাত্রীরা বলেন, দূরপাল্লার লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। ইঞ্জিনরুমের পাশ থেকে চায়ের দোকান এবং খাবার ক্যান্টিন অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্যই তারা দাবি করেন।
অভিযান ট্র্যাজিতে বাবা-মা ও ভাই হারানো হাফসা পেলেন জিপিএ-৫ ॥ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনায় বাবা-মা ও ভাই হারানো হাফসা আক্তার পেয়েছে জিপিএ-৫। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো বরগুনার মেয়ে হাফসা আক্তারের (১৮)। সব আনন্দই ভেসে গেছে হাফসা ও তার ছোট ভাই-বোনের চোখের পানিতে।
হাফসাকেই এখন দায়িত্ব নিতে হবে তার ছোট বোন সুমাইয়া (১৪) ও ভাই ফজলুল হকের (১০)। তারা তিন ভাই-বোনই মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থী। ভূমিহীন পরিবারের সন্তান হাফসার পক্ষে কি এতোবড় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে? দুর্ঘটনার পর থেকে নিকটাত্মীয় ব্যতিত আর কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
এখনও পায়নি কোন সরকারী সহায়তা। বরগুনার সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় লবনগোলা মানিকখালী গ্রামের হাকিম শরীফ ও পাখি বেগমের চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে হাফসা আক্তার এবছর বরগুনার সদর উপজেলার কালীরতবক দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি এলাকার এক যুবকের সাথে সামাজিকভাবে শুক্রবার হাফসার বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ২০ ডিসেম্বর আড়াই বছরের শিশুপুত্র নাসিরুল্লাহকে নিয়ে স্বামী হাকিম শরীফের কাছে ঢাকায় গিয়েছিলেন পাখি বেগম। স্বামী ও পুত্রকে নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রী হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পাখি বেগম। ওইদিন দিবাগত রাতে সুগন্ধা ট্র্যাজেডির পর তারা তিনজনই নিখোঁজ রয়েছেন।
তিন লঞ্চে জরিমানা ॥ নৌ দুর্ঘটনারোধে বরিশাল নদীবন্দরে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকাগামী সব লঞ্চে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এসময় লঞ্চের ইঞ্জিন ও যাত্রীদের নিরাপত্তাসামগ্রী যথাযথভাবে না রাখায় তিনটি লঞ্চ থেকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে সাতটি লঞ্চকে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালনা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।