সৈকতে ফিস ফ্রাই মার্কেট, কুয়াকাটায় বিপাকে পর্যটকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন আনু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪০ অপরাহ্ন
সৈকতে ফিস ফ্রাই মার্কেট, কুয়াকাটায় বিপাকে পর্যটকরা

সাগরে ভাটায় সৈকতের পরিধি থাকে মাত্র দুই খেকে তিনশ’ মিটার, আর জোয়ার হলে পর্যটকদের সাগরের ঢেউ উপভোগ করতে হয় সড়কে দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়াকিং জোনের মাত্র দুইশ’ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে সামুদ্রিক ফিস ফ্রাই মার্কেট। এসব দোকানের মাছের বর্জ্য ও নষ্ট মাছ প্রকাশ্যেই পর্যটকদের হাটা-চলার সৈকতে ফেলা হচ্ছে পলিথিনে ভরে।


এছাড়া মাছ ধোয়ার পানিও ফেলা হয় সৈকতে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মূল সৈকতে এ কারণে পচা মাছের দুর্গন্ধ ও মৎস্য বর্জ্যে রাতের আঁধারে হাটতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছে পর্যটকরা। এখানকার ফিস ফ্রাই মার্কেটে প্রশাসনিক কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন তদারকি নেই। নেই মাছের মূল্য তালিকা ও প্রক্রিয়াজাতের সঠিক ব্যবস্থা। মাছের জাত নির্ণয়ে ভূমিকা নেই মৎস্য বিভাগের। এ কারণে পর্যটকরা যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব মাছ ফ্রাই ও প্রস্তুতের প্রায়ই পর্যটকরা পেটের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 


পরিবেশ-কর্মীরা বলছেন, কুয়াকাটা সৈকত ভ্রমণ উপযোগী করতে এ ফিস ফ্রাই মার্কেটটি অন্যত্র স্থানান্তর প্রয়োজন। আর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, তারা এ বিষয়টি তদারকি করবেন এবং একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে তাদের নিয়ে আসবেন।


এদিকে প্রতিবছরই সাগরের ভাঙনে কুয়াকাটা সৈকতের প্রস্থ কমছে। ফলে দিনের আলোতে সাগরে ভাটার সময় পর্যটকরা পূর্ব ও পশ্চিমের সৈকতের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বেড়াতে পারে। মূলত শেষ বিকেলে সূর্যাস্ত দেখতে পর্যটকদের ঢল নামে। সূর্যাস্ত শেষে সৈকতে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এ কারণে পর্যটকরা সৈকতের জিরো পয়েন্টে ঘোরাঘুরি করে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করে। কিন্তু এখানেই ঘটে বিপত্তি এ ফিস ফ্রাই মার্কেটের কারণে। এ মৌসুমে কুয়াকাটায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটায় এ দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।


যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মাছ প্রস্তুত করে পর্যটকদের পরিবেশন করছেন। এবং এসব মাছ সব তাজা ও সঠিক নিয়মে বরফজাত করা। রান্নার তেল ও মশলাও উন্নতমানের ব্যবহার করছেন। তবে সৈকতে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি তারা স্বীকার করছে না।


তবে পর্যটকরা বলছেন, সৈকত খুবই ময়লা। আর রাতের আঁধারে সৈকতে হাটা যায় না মাছের দুর্গন্ধে। এছাড়া এসব দোকানে মাছের অতিরিক্ত মূল্য নেয়া হচ্ছে। খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে নোংরা পরিবেশে। কিন্তু বিকল্প কোন বিনোদন ও হাঁটার ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা বাধ্য হয়ে ফিস ফ্রাই মার্কেটে ভিড় করছে।


পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, কুয়াকাটা সৈকত যেন ময়লার ভাগাড়। আর এসব ফ্রাই মার্কেটের বর্জ্য পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় বনাঞ্চলের মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করছেন না।


কলাপাড়া ৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ কুমার সরকার বলেন, সামুদ্রিক অনেক মাছ সঠিকভাবে প্রস্তুত ও রান্না করলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়না। এ কারণে পেটের অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। প্রায়ই কলাপাড়া ও কুয়াকাটা হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে অনেক পর্যটক আসছেন যারা এ ফিস ফ্রাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এসব ফিস মার্কেটে যথা নিয়মে মাছ প্রস্তুত হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করে দেখা উচিত প্রশাসনের।


কলাপাড়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কুয়াকাটা ফিস ফ্রাই মার্কেটে যাতে খাবার উপযোগী মাছ বিক্রি হয় সে বিষয়টি তারা দেখবেন। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নিবেন তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে।


উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মৃণাল দেবনাথ বলছেন, তাদের লোকবল কম, তাই সবসময় সব জায়গায় তারা তদারকি করতে পারছেন না। তবে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে যাতে পর্যটকদের খাবার পরিবেশন করা হয় বিষয়টি তারা দেখবেন।