দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফের ভাঙন, নদীগর্ভে মসজিদসহ নানা স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মইনুল হক মৃধা, জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: সোমবার ৩০শে আগস্ট ২০২১ ০৬:১৮ অপরাহ্ন
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ফের ভাঙন, নদীগর্ভে মসজিদসহ নানা স্থাপনা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৩ ও ৪নং ফেরিঘাটের মাঝামাঝি ছিদ্দিক কাজীর পাড়া এলাকায় সোমবার (৩০আগস্ট) সকাল ৮টার থেকে হঠাৎ তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় মুহুর্তের মধ্যে ৫টি বসত ভিটা, ছিদ্দিক কাজীর পাড়া জামে মসজিদসহ প্রায় ১'শ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।


এসময় শত শত মানুষের চোখের সামনে তাদের প্রিয় মসজিদটি বিলীন হতে দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর আকস্মিক ভাঙন শুরু হওয়ায় সরিয়ে নিয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি এবং ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ৩,৪,৫ ও ৬নং ফেরিঘাট এবং প্রায় ২শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা। বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিত ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যে জিওব্যাগ ফেলছে তা কোন কাজেই আসছে না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।


স্থানীয়রা বলছেন, ইতিপূর্বে গত কয়েকদিন আগে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায়, ভাঙ্গনে প্রথম দফায় ১০টি বসত বাড়িসহ প্রায় ১৫০মিটার, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০মিটার, তৃতীয় পর্যায়ে আরো ৩০মিটার এলাকা পদ্মার তান্ডবে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওটিউব ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করলেও ভাঙন ঝুঁকি থাকা সত্বেও ৩,৪,৫ ও ৬নং ফেরিঘাটসহ দৌলতদিয়া ছিদ্দিক কাজীর পাড়া এলাকায় ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বিআইডব্লিউটিএ। ফলে মসজিদসহ ৫টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। এদিকে ভাঙন শুরু হওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে শুরু করলেও তা কোন কাজেই আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে ৪টি ফেরিঘাটসহ ছিদ্দিক কাজীর পাড়া এলাকার পুরোটাই যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।


স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম আশরাফ বলেন, ভাঙনে ছিদ্দিক কাজী পাড়ার সিদ্দিক কাজী, হান্নান কাজী, মান্নান কাজী, আরশাদ আলী ও বাচ্চু খানের বসতাভটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তারা তাদের ঘরবাড়ি গুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এছাড়া ভাঙন আতঙ্কে সেখানকার আরো ২০টি পরিবার তাদের বসত ভিটা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। যারা রয়েছে তাদের মধ্যেও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।


দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের দূর্দশা দেখে নিজেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি নিজে, আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান, এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষকে এখানে ভাঙনের বিষয়ে আশঙ্কার কথা বলে আসছিলাম। কিন্তু তারা যথা সময়ে ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। ভাঙন শুরু হওয়ার পর জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হলেও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। বরং এতে সরকারের ব্যয় বেশী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে দৌলতদিয়ার ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ড নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হাজার মানুষ সব কিছু হাড়িয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী দৌলতদিয়া ঘাটকে রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।


বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে  দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে শুরু করেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। এসময় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত ভাঙন রোধ করতে না পারলে এখানকার ৩,৪,৫ ও ৬নং ফেরিঘাট , ঘাটের পাঁকাসড়ক, বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।