মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় ত্রিপুরা থেকে আসা খরস্রোতা ধলাই নদীর ভাঙন ও প্রতিবছরের বন্যা যেন নদীপাড়ের মানুষের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙনে তছনছ করে দেয় মানুষের ভিটেমাটি ও ফসলি জমি। গত বছর কয়েক দফা বন্যায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ১৩টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
বন্যা পরবর্তী আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়নি। ফলে নতুন বর্ষা মৌসুমের প্রাক্কালে নদীপাড়ের মানুষ আবারও বন্যা ও ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। রামপাশা, রামপুর, নারায়নপুর, চৈতন্যগঞ্জ, কুমড়াকাপন, কান্দিগাঁওসহ প্রায় ১২টি গ্রামে বন্যার কারণে বসতঘর ও জমি হারিয়ে শতাধিক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রামপাশা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুন নূর চৌধুরী, মো. আব্দুর রব চৌধুরী, মো. আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরীসহ অনেকেই নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, “গত বছর নদী ভাঙনে আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে। এবারও বর্ষার আগে যদি বাঁধ ঠিক না করা হয়, তাহলে একই দুর্ভোগে পড়তে হবে।”
এ অবস্থায় নদীপাড়ের মানুষ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও জিও ব্যাগ পাইলিংয়ের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। রহিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। ছাইয়াখালী হাওড় (পাবসস) লিমিটেড ও স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে সম্প্রতি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছাইয়াখালী হাওড় উন্নয়ন (পাবসস) লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওয়াকিল আহমেদ বলেন, “বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িক কাজ করা হলেও তা পানিতে ভেসে গেছে। এইভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের দাবি—স্থায়ী বাঁধ ও ব্লক পাইলিংয়ের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ করা হোক।”
রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিতাংশু কর্মকার বলেন, “দশ বছর ধরে দেখছি ধলাই নদী এভাবেই বারবার ভাঙছে। বস্তা দিয়ে ঠেকানো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হলো ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ।”
এদিকে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ জানান, “এই অর্থবছরেই ধলাই নদীর ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। কিছু কাজের টেন্ডার শেষ হয়েছে এবং কিছু চলছে। পর্যায়ক্রমে সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামত করা হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, কথা নয়—প্রকৃত কাজ দেখতে চান তারা। সময়মতো বাঁধ মেরামত না হলে এ বছর আবারও ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়বে ধলাই নদীপাড়ের মানুষ।