মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ বছরের পর বছর ধরে সড়ক উন্নয়নের অপেক্ষায় থাকলেও বাস্তবে মিলছে না কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন। কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও আশপাশের সীমান্তবর্তী গ্রামের কাঁচা ও খানাখন্দে ভরা সড়কে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।
বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের জাম্বুরাছড়া গ্রামের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা শত বছরেও পাকা হয়নি। জাম্বুরাছড়া থেকে হুগলিয়া পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তাটি এখনও পুরোপুরি কাঁচা। শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে মোটরসাইকেল বা জিপে চলাচল করা গেলেও বর্ষায় কাদায় হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে।
গ্রামবাসীরা জানান, বর্ষার মৌসুমে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হয় হাঁটু কাদা মাড়িয়ে। জরুরি রোগী পরিবহন কিংবা কৃষিপণ্য বাজারজাত—সব ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাস্তাটি। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি বরাদ্দ বা দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সিন্দুরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আরাফাত রবিন জানান, রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে, নতুনভাবে আবারো প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন বলেন, গ্রামবাসীর সুবিধা নিশ্চিত করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী যোগীবিল, চেরারপার, লাংলিয়া, শিবপুর ও আলীনগর চা-বাগান এলাকার প্রায় সাত হাজার মানুষ মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আদমপুর বাজারের সঙ্গে সংযোগকারী এই সড়কের পুরোটা কাদাপানিতে ভরা ও অচল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজও কেউ রাস্তাটি পাকাকরণে উদ্যোগ নেয়নি। আলীনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্জনা বেগম হেনা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস পাওয়া গেছে।
এছাড়াও কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশ কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে। দুই বছর আগে ঠিকাদার নিয়োগ হলেও কাজ হয়নি। আদমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও এলজিইডি কর্মকর্তারা জানান, কাজ প্রক্রিয়াধীন।
কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রূপসপুর গ্রামের অভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থাও করুণ। হাটু কাদা পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, রোগী পরিবহনও সম্ভব নয়। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান, উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের মুসলিমবাগ এলাকাও একই দুর্ভোগে। সড়কে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ—সব মিলিয়ে সীমাহীন কষ্টে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ।
এলজিইডির শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী জানান, কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যেই কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
অসংখ্য প্রতিশ্রুতি, প্রকল্পের অপেক্ষা আর কাদা-মাটি মাড়িয়ে চলা মানুষগুলোর প্রশ্ন—উন্নয়নের আলো কি একদিন সত্যিই আসবে?