চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর চার বছর অতিবাহিত হলেও ঝুলে আছে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী বগা সেতুর কাজ। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিতেই ঝুলে রয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২০ লাখ মানুষের ভাগ্য। জণগুরুত্ত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় একদিকে যেমন মানুষের দূর্ভোগ কমছেনা অপরদিকে ফল শূণ্য চিঠি চালাচালির কারণে সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাউফল, দশমিনা এবং গলাচিপা উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ সড়ক পথে রাজধানীর সাথে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাউফলের বগা ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছিল। ওই দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হলে সেতু নির্মাণের ব্যয়ভার নিয়ে চীনের সাথে কথা বলেন সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৪ মে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বাউফলের বগা ফেরিঘাট এলাকা পরিদর্শনে আসেন চীনের একটি প্রতিনিধিদল। সেতু নির্মাণে ওই প্রতিনিধি দলের সবুজ সংকেত পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে পটুয়াখালীর লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে বগা ফেরিঘাটে লোহালিয়া নদীর ওপর ৯ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণে জন্য ২০১৭ সালের ১১ মে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং চীনা রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন আরএমবি ইউয়ান অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ি সেতু, এ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছিল।
অপরদিকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহসহ অন্যান্য সমুদয় কাজের ব্যয়ভার বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ডিপিপি প্রনয়ণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চঃ দঃ) রওশন আরা খানম পটুয়াখালী জেলা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ লোকের সংখ্যা এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠান। কিন্তু অজানা কারণে আজও সেই সেতু নির্মাণ এলাকায় শুরু হয়নি ওই সব তথ্য সংগ্রহের কাজ। সেতুর নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই তিন উপজেলার মানুষ। সেতুর অভাবে বাউফল, দশমিনা এবং গলাচিপা উপজেলার মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাউফল, দশমিনা এবং গলাচিপা উপজেলার জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জানান, বগার লোহালিয়া নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি করে এই তিনটি উপজেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। এই তিন উপজেলার মানুষের পদ্মা সেতু ও লেবুখালী সেতুর সুফল পেতে হলে এই সেতুটি নির্মাণের কোন বিকল্প নাই। সেতুটি নির্মিত হলে তিনটি উপজেলাই উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হবে এবং রাজধানীর সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগে ফেরি পাড়াপাড়ের মতো আর কোন বিড়ম্বনা থাকবে না। সেতুটি নির্মাণ হলে পায়রা বন্দরের সাথে স্থায়ী একটি বিকল্প যাতায়ত ব্যবস্থা হবে। একই সাথে ভোলা জেলার দক্ষিনাংশের মানুষেরও অনেক উপকার হবে। এছাড়া তিনটি উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য অল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে। নির্মিত হবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। সৃষ্টি হবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান।
সেতু নির্মাণের ব্যাপারে পটুয়াখালীর সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য জানা গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, আগামি দু’এক বছরের মধ্যে বগা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে। অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালী সার্কেলের (সড়ক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইমদাদ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে আমরা মন্ত্রণালয়ে এই সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে বেশ কিছু চিঠি পাঠিয়েছি। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণে চীনা প্রতিনিধি দলের পূনরায় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। ওনাদের পরিদর্শন শেষে সেতু নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। আশা করছি শীঘ্রই বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।