প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬
ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কেঁপে উঠেছে জনপদ। হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় গুলিবিনিময়ে অন্তত ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দক্ষিণ গাজার জর্ডানিয়ান হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলা গোলাগুলিতে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে।
হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট শনিবার সকালে একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায়। লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র দুগমুশ গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা। কিন্তু অভিযানের শুরুতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আরও বলেন, দুগমুশ যোদ্ধারা প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুললে গোলাগুলি শুরু হয় এবং ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে হামাসের নিরাপত্তা বাহিনীর আট সদস্য নিহত হন। পরে সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষে দুগমুশ গোত্রেরও অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তেল আল-হাওয়া এলাকার একটি বহুতল ভবনে দুগমুশ যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল। তাদের ঘিরে ফেলার পর তিন শতাধিক হামাস সদস্য সেখানে অভিযান চালালে তীব্র গুলিবিনিময় শুরু হয়।
এলাকাবাসীর মতে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই সংঘর্ষে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া এসব মানুষ আবারও নিজেদের মধ্যকার সংঘাতে নতুন করে শরণার্থী হওয়ার শঙ্কায় ভুগছে।
একজন স্থানীয় নাগরিক বলেন, “মানুষ এবার ইসরায়েলি হামলা থেকে নয়, নিজেদের লোকদের কাছ থেকে পালাচ্ছে।” তিনি জানান, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে অনেক পরিবার ইতোমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের দিকে আশ্রয়ের খোঁজে রওনা হয়েছে।
দুগমুশ গোত্র গাজার অন্যতম শক্তিশালী গোত্র হিসেবে পরিচিত, যারা দীর্ঘদিন ধরে হামাসের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে আছে। অতীতেও তাদের মধ্যে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। হামাসের দাবি, সম্প্রতি দুগমুশ যোদ্ধারা তাদের দুই সদস্যকে হত্যা করেছে এবং আরও কয়েকজনকে আহত করেছে।
অন্যদিকে, দুগমুশ গোত্রের এক সূত্র স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হামাস জোর করে একটি ভবন দখল করতে চেয়েছিল, যেখানে তাদের বাস্তুচ্যুত পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছে, হামাস ঐ পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
হামাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পাশাপাশি সতর্ক করে বলেছে, প্রতিরোধ আন্দোলনের নামে কোনো অবৈধ সশস্ত্র কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না, এবং শান্তি-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।