প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫৭
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে গাজা নগরে ফিরতে শুরু করেছেন হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। দীর্ঘদিনের বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণের পর শহরটি এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, তবু অনেকে ফিরে যাচ্ছেন নিজের ভিটেমাটি দেখতে, কেউবা খুঁজছেন প্রিয়জনের চিহ্ন।
যুদ্ধবিরতির পর শনিবার সকাল থেকেই গাজার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পায়ে হেঁটে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু ও প্রবীণরা। অনেকে হাতে ছোট ব্যাগ, কেউ বা মাথায় বহন করছেন শেষ সম্বল। প্রত্যেকে ফিরে পাচ্ছেন না ঘর, বরং দেখতে পাচ্ছেন শুধু ধ্বংসের ছাপ।
দ্য টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরই রাজা সালমি নামের এক ফিলিস্তিনি নারী সিদ্ধান্ত নেন নিজের বাড়িতে ফিরবেন। কয়েক সপ্তাহের তীব্র বোমাবর্ষণে যে অঞ্চলটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেই আল-রিমাল পাড়ায় পৌঁছে তিনি দেখেন তার বাড়ি ধসে পড়ে আছে, শুধু ভাঙা ইট আর ধুলোয় ভরা একটি স্তূপ বাকি।
রাজা বলেন, “আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি। প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হয়েছে, হয়তো এবারই সব শেষ। যখন অবশেষে পৌঁছালাম, দেখলাম আমার ঘর নেই—শুধু ধ্বংসস্তূপ। চোখের পানি থামাতে পারিনি, কারণ এখানে আমার জীবনের প্রতিটি স্মৃতি ছিল।”
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজার আকাশে এখনও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ, হাসপাতালগুলোতে এখনও আহতদের ভিড়। তবু কিছু ফিলিস্তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, কারণ তাদের বাড়ি এখনও টিকে আছে। কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে মেরামতের চেষ্টা করছেন, আবার কেউ নির্মাণসামগ্রী খুঁজছেন ধ্বংসস্তূপের ভেতরে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, শনিবার একদিনেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা নগরে ফিরে এসেছেন। সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ির জানান, “যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষ শহরে ফিরেছেন। তবে অনেক এলাকায় প্রবেশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ধ্বংসাবশেষের নিচে অনেক বোমা ও বিস্ফোরক পড়ে আছে।”
গাজার রাস্তায় এখন কান্না, হতাশা ও আশার মিশ্র চিত্র। কেউ ফিরে পেয়েছেন ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির অবশিষ্ট অংশ, কেউ হারিয়েছেন সবকিছু। কিন্তু তবু তারা ফিরে আসছেন, কারণ এটি তাদের জন্মভূমি, তাদের আশার শেষ ঠিকানা।