প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১৭:৪৩
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজন হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডাম। এই হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৯২ জন। সোমবার জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল ইসরাইলি চ্যানেল ১২, তবে পরে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন প্রবীণ নারী, দুইজন পুরুষ এবং আরেকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিও একই তথ্য নিশ্চিত করেছে এমডিএর একটি বিবৃতির সূত্র ধরে। আহতদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সি এক নারী রয়েছেন যিনি গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডাম জানিয়েছে, আক্রান্ত চারটি স্থানের মধ্যে দুটি এলাকায় এখনও অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সেখানে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একাধিক শহরে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। হামলার তীব্রতা ও বিস্তৃতি ইসরাইলি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের সূচনা ঘটে রোববার রাতে, যখন ইসরাইল ইরানের অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে সোমবার ভোরে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে। দুই দেশের এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে শান্তির আহ্বান জানানো হলেও পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান যদি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা অব্যাহত রাখে তবে তেহরানকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি জানান, ভবিষ্যতে আরও কঠোর জবাবের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইসরাইল এখন প্রতিরোধ নয়, প্রতিশোধে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মাদ বাকের গালিবাফ বলেন, শত্রুদের জন্য ইরান জাহান্নাম তৈরি করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের যেকোনও হামলার জবাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর হবে এবং এতে কেউ রেহাই পাবে না। ইরানের এই বক্তব্যে সংঘর্ষ আরও বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা শুধু ইসরাইল ও ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং গোটা অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে বাস্তবতার নিরিখে দেখা যাচ্ছে, দুই দেশের নেতৃত্ব কেউই আপাতত পিছু হটার অবস্থানে নেই। বরং উভয়পক্ষ আরও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বার্তা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতারা একটি যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।