উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকির জন্য সুপরিচিত। এখানে উৎপাদিত দেশীয় ছোটমাছের শুঁটকি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় দেশজুড়ে এর চাহিদা রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, ভারতেও ভরতেঁতুলিয়ার শুঁটকির কদর রয়েছে।
তবে এবার মাছের অভাবে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। অল্পস্বল্প মাছও বাজারে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আত্রাই উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫০ মেট্রিকটন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। উৎপাদিত শুঁটকির বাজার রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট এবং ঢাকায়; পাশাপাশি ভারতেও রপ্তানি হয়।
একসময় এখানে ৪০ জন ব্যবসায়ী শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত থাকলেও বর্তমানে সক্রিয় ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৫-১৮ জনে সীমিত। সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই রেল স্টেশনের দুই পাশের চাতালে নারী-পুরুষরা মাছ কাটছেন, ধুয়ে লবণ লাগিয়ে শুকতে দিচ্ছেন। কিন্তু মাছের অভাবে অনেক চাতাল ফাঁকা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আত্রাই উপজেলার নদী ও খাল-বিলগুলোতে মাছ কমে যাওয়ায় শুঁটকির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। চায়না দুয়ারি, সুতি, কারেন্ট ও ভাদাই জালের অবাধ ব্যবহারের কারণে এবছর মাছ পাওয়া যায়নি। ফলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অধিকাংশ চাতাল বন্ধ ছিল।
শুঁটকি ব্যবসায়ী রামপদ শীল বলেন, ‘বাজারে মাছ পাওয়া কম, যা কিনতে হচ্ছে ১০০–২২০ টাকা প্রতি কেজি মূল্যে। দৈনিক প্রায় ২০–২৫ মণ মাছের চাহিদা, কিন্তু স্থানীয় বাজারে মাত্র ৭–১০ মণ মিলছে।’ অন্য ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান ও সবদুল প্রামানিক বলেন, ‘বর্ষার শুরুতেই অবৈধ জালের ব্যবহার মাছের সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে চাতাল ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে।’
নারী শ্রমিক আনজুমান বেগম বলেন, ‘শুঁটকি চাতালে কাজ করে যা উপার্জন করি, তাই সংসার চলে। এখন কাজ কমে যাওয়ায় অনেকেই বসে থাকে।’
আত্রাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান জানান, শুঁটকির উৎপাদনে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং অসাধু মাছ শিকার রোধে অভিযান চালানো হচ্ছে।