প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:৪৭
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানে ইসরায়েলি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব। শুক্রবার এপি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় চলমান নৃশংসতার পাশাপাশি ইরানে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনকে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে সৌদি সরকার জানায়, ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে এই ধরনের হামলা শুধু ইরানের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করছে।
এই বিবৃতির আগে ইসরায়েল শুক্রবার সকালে ইরানের বিভিন্ন পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিল রাজধানী তেহরানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমপ্লেক্স। ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেজন্য এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের এই অভিযান ‘রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত, যা মূলত একটি পূর্ণমাত্রার প্রতিরোধমূলক সামরিক কার্যক্রম। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের টার্গেট ছিল ইরানের সামরিক কমান্ডারদের ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং গোপন গবেষণা ল্যাব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ড্রোন হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার দিকে আক্রমণ শুরু করেছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, একসঙ্গে শতাধিক ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি করছে ইরানি সামরিক বাহিনী।
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এই বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। একদিকে তারা গাজা সংকটের নিন্দা জানিয়ে আসছে, অন্যদিকে ইরানকেও একধরনের কূটনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক জোটের ইঙ্গিত হতে পারে।
সৌদি আরবের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাঠে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, এতদিন পর্যন্ত তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক চিরকালীন উত্তেজনার মধ্যেই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিবৃতি শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, বরং ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে সঙ্ঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান বলেই ধরা যেতে পারে। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মাঝে নতুন এক কূটনৈতিক মাত্রা যোগ হয়েছে।