প্রকাশ: ৮ জুন ২০২৫, ১১:২১
গাজা উপত্যকায় ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন এক হামলায় রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে পুরো অঞ্চল। শনিবার চালানো এই বর্বর আক্রমণে অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ঈদের দিন যখন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলেমিশে কাটানোর কথা ছিল, তখন ধ্বংস আর মৃত্যু ঘিরে ফেলেছে গাজার আকাশ।
গাজার শহরতলি সাবরা এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হঠাৎ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। কোনো ধরনের পূর্ববার্তা ছাড়াই চালানো এই হামলায় মুহূর্তেই ধসে পড়ে পুরো ভবনটি। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের ভাষ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা ঈদের রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখি পুরো ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে, কেউ সন্তানকে খুঁজছে, কেউ মরদেহ টেনে তুলছে।
এই ঘটনার পরপরই গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ হামলাটিকে ‘পূর্ণাঙ্গ গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা আহতদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের দল।
একজন শরণার্থী বলেন, ঈদের সকালে আমরা সন্তানদের নতুন জামা পরাতে পারিনি, কারণ সে সময় আমরা লাশ গুনছিলাম। গাজার মানুষের কাছে ঈদ মানে এখন আর আনন্দ নয়, বরং চোখের জল ও হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মিছিলে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে গাজার দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনিস এলাকার আল-আমাল হাসপাতাল এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ওই এলাকা এখন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে সাধারণ নাগরিকদেরও সরে যেতে বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গাজায় চিকিৎসা, উদ্ধার ও খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো একে মানবতার চরম বিপর্যয় হিসেবে দেখছে। গাজার ঈদ পরিণত হয়েছে মৃত্যুর মিছিলে, বিশ্ব বিবেক কি এবারও নীরব থাকবে?