প্রকাশ: ৫ মে ২০২৫, ২১:৪২
পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যখন নতুন করে উত্তপ্ত, ঠিক এমন সময় দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তুর্কি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ করাচি বন্দরে নোঙর করার ঘটনায়। পাকিস্তান নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তুরস্কের 'টিসিজি বুয়ুকাদা' নামের যুদ্ধজাহাজটি করাচিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে এবং এটি কিছুদিন করাচি বন্দরে অবস্থান করবে।
এই সফরের অংশ হিসেবে তুর্কি নাবিকরা পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যৌথ সামুদ্রিক মহড়ায় অংশ নেবেন, যা দুই দেশের সামুদ্রিক কৌশলগত সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে দেখা হচ্ছে না। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে এই সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে এবং কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষ করে এমন সময়ে যখন জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে তিক্ততায় মোড় নিয়েছে, সেই মুহূর্তে করাচি বন্দরে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারত মনে করছে, তুরস্ক কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য নষ্ট করছে।
তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করাচি বন্দরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানো মূলত দুই দেশের মধ্যকার নিয়মিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ। তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো পাকিস্তানকে সাবমেরিন, ড্রোনসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে এবং বিগত কয়েক বছর ধরেই উভয় দেশের মধ্যে নিয়মিত যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
তবে ভারত আশঙ্কা করছে, এর আড়ালে পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে গোপন সামরিক সহযোগিতা আরও গভীর হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের কৌশলগত ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তুরস্ক যদি পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম বা অস্ত্র পাঠায়, তবে তা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিতে পারে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন।
ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে সম্প্রতি করাচিতে তুর্কি সামরিক বিমানের অবতরণ নিয়ে। যদিও তুরস্ক জানিয়েছে, বিমান অবতরণের উদ্দেশ্য ছিল শুধু জ্বালানি সংগ্রহ, অস্ত্র সরবরাহ নয়। তবে তবুও এই ঘটনাগুলো নয়াদিল্লিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে তুরস্কের সক্রিয়তা ভবিষ্যতের জন্য আরও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত, পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যকার বর্তমান গতিপ্রকৃতি ভবিষ্যতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।