প্রকাশ: ৪ মে ২০২৫, ১১:৪৬
কাশ্মিরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পর্যটক ছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুললেও এ পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
ঘটনার পরপরই সীমান্ত অঞ্চলে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে উভয় দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে ‘অপারেশনাল ফ্রিডম’ দিয়েছেন, যার অর্থ যে কোনও প্রয়োজনে সেনা ব্যবস্থা নিতে পারবে। একই সময়ে পাকিস্তানও সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে এবং বলেছে, তারা সম্ভাব্য হামলার গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন ভারত শনিবার জানায়, পাকিস্তানের পতাকাবাহী কোনও জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়তে পারবে না। একইসঙ্গে ভারতীয় জাহাজের পাকিস্তানি বন্দরে প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশের সম্পদ ও জনস্বার্থ রক্ষায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জবাবে পাকিস্তানও দ্রুত পাল্টা ঘোষণা দেয়। দেশটির মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের পতাকাবাহী জাহাজকে পাকিস্তানের কোনও বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে পাকিস্তানের জাহাজও ভারতের বন্দরে প্রবেশ করবে না বলে জানানো হয়। বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতির বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই ঘটনার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে, যা ছিল দু’দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সমঝোতা। পাকিস্তানও পাল্টা জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান শনিবার ‘আবদালি’ নামক একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি “সিন্ধু মহড়া”র অংশ ছিল। ভারতের কর্মকর্তারা একে “খোলামেলা উসকানি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই ধরনের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপ্রক্রিয়াকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে উভয় দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনার বিকল্প নেই।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং জনজীবনের স্বাভাবিকতা রক্ষায় দ্রুততম সময়ে এই সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। তবে এখন পর্যন্ত উভয় দেশই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।