জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারী ফুটবল খেলা নিয়ে আপত্তি ও মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় আলেম সমাজের নেতারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। শুক্রবার সকালে তদন্ত টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর আলেম সমাজের নেতারা এমন কথা বলেন।
গত ২৮ জানুয়ারি আক্কেলপুর উপজেলায় নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করতে এলাকার বিক্ষুব্ধ মুসল্লি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মাদরাসার ছাত্ররা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। এ ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচিত হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং স্থগিত ফুটবল ম্যাচ পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়। জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঘটনার কারণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। শুক্রবার সকালে তদন্ত টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং আয়োজক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত টিম চলে আসার পর আলেম সমাজের কয়েকজন নেতা মাঠে যান। বাচ্চাহাজী মাদরাসার শিক্ষক মোস্তাকিম হোসেন বলেন, বিগত দিনে যা হয়েছে তা আমরা ভুল করেছি। আমরা অনুতপ্ত এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাই। ভবিষ্যতে নারী ফুটবল খেলায় আর বাধা দেওয়া হবে না।
স্থানীয় আলেম সমাজের নেতা মাওলানা আব্দুস সামাদ বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে যা হয়েছে তার জন্য আমরা সমঝোতা চাই। তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, নারীরা খেলবে, খেলুক। খেলার মাঠে তারা খেলুক, এতে সমস্যা নেই। টি-স্টার ক্লাবের সভাপতি সামিউল হাসান ইমন বলেন, খেলা আয়োজন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের চাওয়া যেভাবে খেলা চলছিল, ওইভাবে খেলা হোক।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উভয় পক্ষের প্রায়ই সমঝোতা হয়েছে। সেখানে খেলা হলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টিন দিয়ে ঘেরাও করে ফুটবল খেলার আয়োজন করে স্থানীয় টি-স্টার ক্লাব। গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী দলের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ছিল। এলাকায় সেটি মাইকিং করে প্রচার করা হয়। এতে স্থানীয় আলেম সমাজ ও মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ২৮ জানুয়ারি আসরের নামাজের পর তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হন এবং খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।