সোমবার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় ভারত। আগের দিন থেকে ইতিহাসের অন্যতম কঠোর সামরিক নিরাপত্তা জারি করা হয় জম্মু-কাশ্মীরে। কড়া কারফিউর মধ্যে বন্ধ রাখা হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট।ফলে কাশ্মীরে কী ঘটছে, এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন বাইরে থাকা এখানকার বাসিন্দারা। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে।দ্য প্রিন্ট জানায়, বৃহস্পতিবার রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনারের অফিসের বাইরে জড়ো হন কাশ্মীরিরা। তারা রাজ্যের বাইরে থাকা সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়ার দাবি জানান। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে এক মিনিটের জন্য দুইটি টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয় তাদের।মওজা আখ পরিচয় দেওয়া এক নারী বলেন, “বেঙ্গালুরুতে থাকা আমার ছেলেকে ফোন দিতেই প্রথমে কেঁদে দেয় সে। আমাদের নিয়ে চিন্তা না করার জন্য বলি তাকে এবং নিজের খেয়াল রাখতে বলি। আমি তাকে বলি, ঈদে বাড়ি এসো না বাবা। এখানের পরিস্থিতি ভালো নয়।”
টেলিফোন করার সুযোগ পেয়ে ওই নারী নিজেই ডিসি অফিসে যান। চেক পয়েন্টে পুরুষদের বেশি তল্লাশির শিকার হতে হয় বলে স্বামীকে না পাঠিয়ে তিনি নিজেই যান ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।একইভাবে আসন্ন কোরবানি ঈদের জন্য কাশ্মীরে ফেরার কথা ছিল বিপুলসংখ্যক মানুষের। অনেকেই কেটে রেখেছিলেন বিমানের টিকিটও। কিন্তু গত রবিবার থেকে কাশ্মীরের সঙ্গে সরকার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার মুখে পড়েন তারা। কাশ্মীরে কী ঘটছে তা নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন তারা।এদিকে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাত্র দুইটি টেলিফোন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ডিসি অফিসে কথা বলতে ভিড় জমান অনেক মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী।বিকেল পাঁচটার কিছু সময় হাজির হওয়া একজন নারী জানান, জম্মু এবং দিল্লিতে তার দুই মেয়ে থাকে। একজন মেডিকেলে ইন্টার্নি করছে আরেকজন পড়ছে সাংবাদিকতায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তিনি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এখন সামান্য দেরি হওয়ায় টেলিফোন বন্ধ করে দিয়েছে ডিসি অফিস।এ ব্যাপারে ডিসি অফিসের এক কর্মকর্তার স্ত্রী জানান, ডিসি অফিসের ভেতরে নারীদের তল্লাশি করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নেই। তাই টেলিফোনে কথা বলার আর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
এমন সময় ওই নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি জানি তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে আমরা এখানে এসেছি। তাদের উচিত ফোন চালু করে দেওয়া। আমার মেয়েদের টাকা পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। তারা কীভাবে আছে কিছুই জানি না। তারাও আমাদের কোনো খবর জানছে না।” এদিকে রাজ্যসভার এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসছে অঞ্চলটির জনগণ। কারফিউ ভেঙে এরই মধ্যে রাস্তায় নামা শুরু করেছে মানুষ। মঙ্গলবার রাতেই শ্রীনগরের বেশ কিছু জায়গা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অন্ধ করে দেওয়ার ‘পেলেট গান’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।