শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়েছে। কারফিউ বলবৎ রাখতে হাজার হাজার সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কিন্তু তাতেও জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
সোমবার রাতে সরকারবিরোধী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী কলম্বোতে মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে এবং বিক্ষুব্ধ জনতাকে পিছিয়ে রাখার জন্য সতর্কীকরণ গুলি চালিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সেনাবাহিনী ভোরবেলা অভিযান চালিয়ে মাহিন্দাকে উদ্ধার করেছে।
বিক্ষোভকারীরা জোরপূর্বক রাজধানীর 'টেম্পল ট্রিস' বাসভবনে প্রবেশ করে। এরপর তারা প্রধান দ্বিতল ভবনে হামলার চেষ্টা করে। সেখানে মাহিন্দা রাজাপক্ষে তার পরিবারের লোকদের সঙ্গে আটকা পড়েছিলেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ভোরবেলা অভিযান চালিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। তার ভবনে অন্তত ১০টি পেট্রলবোমা ফেলার ঘটনা ঘটেছে। মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে বর্তমানে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার থেকে জরুরি অবস্থায় কারফিউ জারি থাকা দেশটিতে মাহিন্দার অনুগত বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দেশটির জাদুঘর, রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানেও ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এ ছাড়া রাজধানী কলম্বোর বাইরে বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের এক পার্লামেন্ট সদস্যের (এমপি) গাড়ি ঘিরে ধরলে ওই এমপি প্রথমে বিক্ষোভকারীদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন, এরপর নিজের ওপরই গুলি চালান। আত্মঘাতী হওয়া এমপির নাম অমরাকীর্তি আথুকোরালা বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ।
কর্তৃপক্ষ সহিংসতা দমনের চেষ্টায় বুধবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বিরোধী দলগুলো এই দুর্দশার জন্য রাজাপক্ষে পরিবারের শাসনকেই দায়ী করে আসছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অর্থনীতিতে ভুল ব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কা ঋণের ভারে ডুবতে বসেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, গত শুক্রবার এক বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। এরপর গতকাল পদত্যাগ করেন মাহিন্দা। তার পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য পার্লামেন্টের সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।