আরো পাঁচ সপ্তাহ থাকতে পারে ডায়রিয়ার প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৫ই এপ্রিল ২০২২ ০৪:২৪ অপরাহ্ন
আরো পাঁচ সপ্তাহ থাকতে পারে ডায়রিয়ার প্রকোপ

রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, এ প্রকোপ এখনো তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে। মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) ও পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে গত তিন সপ্তাহের ডায়রিয়া রোগীর ভর্তি বিশ্লেষণ করলে একই অবস্থা বহাল থাকার আভাসের সমর্থন মেলে।


মিটফোর্ড হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয় ১৬ মার্চ ৭৮০ জন, ১৭ মার্চ ৮১০ জন, গতকাল সোমবার ৯৫০ জন।আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয় গত ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ জন, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ জন, ২৮ মার্চ এক হাজার ৩৩৪ জন এবং গতকাল ভর্তি হয় এক হাজার ২৭৪ জন। আইসিডিডিআরবি ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


তবে গতকাল ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ দুটি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। মেডিসিন বিভাগের অধীন ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ দুটি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হচ্ছে খুবই কম সংখ্যায়। ডায়রিয়া রোগী এলে তাদের বেশির ভাগকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে।


মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৯ তলায় মেডিসিন বিভাগের অধীন ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কুলসুম বেগম (২০) নামের দক্ষিণ বাসাবো এলাকার একজন ডায়রিয়া রোগীকে পাওয়া যায় ওই ফ্লোরে। আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড কেন নেই—প্রশ্নে কতর্ব্যরত কোনো চিকিৎসক কথা বলতে রাজি হননি। দুপুর ২টার দিকে বাসাবো এলাকার সামিয়া বেগম (২৪) নামের একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তাঁর স্বজনরা। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর স্বজনদের বলে দেন রোগীর অবস্থা জটিল, মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বাধ্য হয়ে স্বজনরা রোগী নিয়ে ফিরে আসে।


ডায়রিয়ার অবস্থার আপাতত উন্নতির তেমন সম্ভাবনা নেই, এমনটাই জানালেন আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের পরিচালক বাহারুল আলম। তিনি বলেন, অতীতে দেখা যায় ডায়রিয়া প্রকোপ সাধারণত ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বর্তমানে এই প্রকোপ শুরুর মাত্র তিন সপ্তাহ পার হয়েছে। ’


নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক : নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা, খানপুর, গলাচিপা, কলেজ রোড, নন্দীপাড়া, পাঠানটুলী, মাসদাইর, বাবুরাইল, জল্লারপাড়, দেওভোগ পানির ট্যাংক এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রোগীদের ভিড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের। বিভিন্ন বয়সের রোগীরা চিকিৎসা নিতে ছুটছে হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া প্রতিরোধে তাঁরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এ ছাড়া রোগীদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।


গতকাল সোমবার দুপুরে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায়ও শয্যা পাতা হয়েছে। সেখানে অপরিষ্কার আর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে।


উমা রানী দাস (৩৫), থাকেন শহরের গলাচিপা এলাকায়। হঠাৎ পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হওয়ায় চিকিৎসা নিতে চলে এসেছেন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। স্যালাইন নিচ্ছেন। তাঁর স্বামী শ্যামল বণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকালে হঠাৎ পেটে মোচড় দিয়ে পাতলা পায়খানা আর বমি শুরু হলে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ’


তল্লা এলাকার দুই বছরের শিশু ফাতিহারও একই অবস্থা। বাবার কোলে শুয়ে স্যালাইন নিচ্ছে। বাবা গোলাম রাব্বী জানান, ‘আমাদের এলাকায় পানির সমস্যার কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। ’কলেজছাত্র আবুল কালাম আজাদ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে এসে সিরিয়াল নিতে একটু ঝামেলা হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ঠিকমতোই চলছে। ’


জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসেন বিপুল বলেন, এখন প্রতিদিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরাই বেশি আসছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, আজ (সোমবার) দুপুর পর্যন্ত ৯০ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।


নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছরই এ মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। একটু বৃষ্টি হলে আর তাপমাত্রা কমলে এর প্রকোপ কমে যাবে আশা করছি। এ ছাড়া আমরা নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রেখেছি। পর্যাপ্ত ওষুধের মজুদ রয়েছে হাসপাতালে। এরই মধ্যে আমরা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে একটি ডায়রিয়া কর্নার খুলেছি। ’