প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২১, ১৭:২৪
করোনা প্রতিরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে বরিশালে। ফলে হঠাৎ করেই বরিশালে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে। গত দু’দিনে বরিশালে ১২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে বরিশালে এখন পর্যন্ত ৪৯৩৭ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর ৮৯ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে জনগনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন শ্লোগান নিয়ে নগরীতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। পরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ (করোনা) সংক্রমণরোধে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে ২ হাজার মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেন তিনি।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিব আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাস্ক পরিধানপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে গণপরিবহনে চলাচল, দাপ্তরিক কর্মকান্ড ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারণা চালানো হলেও তা মানছেন না বরিশালের মানুষ। করোনা থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার অপরিহার্য হলেও অনেকেই তা মানছেন না। অনেকেই মাস্ক পকেটে রেখে চলাফেরা করছেন। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ শ্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন টানানো থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চায়ের দোকান, মার্কেট, হাট-বাজার ও বাস টার্মিনালে মাস্কবিহীন মানুষের জমায়েত। তাদের অনেকে মনে করছেন করোনার প্রভাব কমে গেছে। পথচারী মাসুম মাতুব্বর বলেন, “এহোন আর করোনা নাই, থাকলেও মোগো ধরবে না”। অবশ্য মাস্ক ব্যবহার করলে ধূলো-বালি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে স্বীকার করেন তিনি। রিক্সাচালক শাহাবুদ্দিন বলেন, “মাস্কের লইগ্যা কোডেও (কোর্টে) ঢোহা লাগে” হেইয়ার পন্নে (জন্য) মাস্ক পকেডে রাখছি”।
কলেজ শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান বলেন, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও নিজেদের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হয়। তাই তিনি মাস্ক ব্যবহার করেই বের হয়েছেন।
ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, প্রশাসনের লোকজনই মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে। আমরা করলে দোষ কোথায়? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এদিকে জনগণকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, করোনার প্রভাব শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়ে জনগণকে সচেতনতায় প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর ব্যতয় হলে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার কথাও জানান তিনি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, বাঁচতে হলে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার যে ভীতি ছিল তা এখন নেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে তারা অনেকটাই উদাসীন। অবশ্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহী করতে নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের প্রয়োজনেই সকলকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ ৭জন এবং ১৫ মার্চ বরিশাল জেলায় নতুন করে ৫ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সদর উপজেলায় ৩৮০১ জন, বাবুগঞ্জ উপজেলায় ১৪৪ জন, উজিরপুর উপজেলায় ১৯৪ জন, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৬৮ জন, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ৬৫ জন, হিজলা উপজেলায় ৬৫ জন, বানারীপাড়া উপজেলায় ১০৩ জন, মুলাদী উপজেলায় ১১৬ জন, গৌরনদী উপজেলায় ১৬৫ জন, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১১৬ জন করে মোট ৪৯৩৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।