দৈনিক ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তম গোলদার
প্রকাশিত: সোমবার ২০শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৪৭ অপরাহ্ন
দৈনিক ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণা

দীর্ঘ ৩০ বছরের প্রকাশনার পর সোমবার (২০ জানুয়ারি) দৈনিক ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পত্রিকাটির মালিকপক্ষ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১২ ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। পত্রিকার একাধিক দায়িত্বশীল সংবাদকর্মী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  


গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকাটির সংবাদকর্মীরা ৮ম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দাবি এবং পূর্বের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। রোববার (১৯ জানুয়ারি) সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের একটি অংশ ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন। এরই প্রেক্ষিতে পত্রিকার মালিকপক্ষ অফিস বন্ধের ঘোষণা দেয়।  


মালিকপক্ষ তাদের নোটিশে উল্লেখ করে, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালানো মালিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এজন্য অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। পত্রিকার কর্মকর্তা ও কর্মীরা এই ঘোষণায় হতবাক হয়েছেন এবং অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।  


ভোরের কাগজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, পত্রিকাটির সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং মালিক সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন। শ্যামল দত্ত এখনো কারাগারে রয়েছেন, তবে সাবের হোসেন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই পত্রিকার কার্যক্রম সংকটে পড়ে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে মালিকপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।  


পত্রিকাটির সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, ভোরের কাগজ সরকারকে ৮ম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে। সরকারের কাছ থেকে ৯০০ টাকা কলাম-ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের সুবিধা পেলেও পত্রিকার কর্মীদের জন্য এই ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করা হয়নি। এতে সাংবাদিকরা তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।  


দৈনিক ভোরের কাগজ দীর্ঘদিন ধরে একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। তবে সাম্প্রতিক আর্থিক সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ এবং মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি জটিলতা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মালিকপক্ষের সিদ্ধান্তে অনেক সংবাদকর্মী তাদের চাকরি হারানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।  


এই ঘটনাটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, পত্রিকাটির মালিকপক্ষ সরকার থেকে সুবিধা নেওয়ার পরও কর্মীদের ন্যায্য অধিকার দেয়নি। তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সাংবাদিকতার নীতিবিরোধী বলে অভিহিত করছেন।  


ভোরের কাগজের বন্ধ হওয়া শুধু এর কর্মীদের নয়, দেশের গণমাধ্যম শিল্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠন এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা, যা বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর একটি গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।