কঠোর লকডাউনে বরিশালের নদীতে চলছে স্পিডবোট !

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৭শে জুলাই ২০২১ ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
কঠোর লকডাউনে বরিশালের নদীতে চলছে স্পিডবোট !

গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত সরকারি নির্দেশে দেশব্যাপী চলছে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সরকারি বিধিনিষেধ মানতে দেশের সব জায়গায় চলছে কঠোর লকডাউন কর্মসূচি। সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়নে মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।



তবে প্রশাসন কঠোর হলেও বরিশালের নদীতে বেপরোয়া স্পিডবোটকে কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না। সর্বাত্মক লকডাউনেও গাদাগাদি করে দ্বিগুণ যাত্রী বহন করছে তারা। অবৈধভাবে এ স্পিডবোটগুলো সরকারী আইন অমান্য করে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নদীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকার যেখানে সারা দেশে কঠোর লকডাউন জারি করে পরিবহন, লঞ্চসহ যান চলাচল বন্ধ রেখেছে।


 


ঠিক সেই সময় তারা সরকারী আইনকে তোয়াক্কা না করে লকডাউনে দ্বিগুনেরও বেশি ভাড়া ও ডাবল যাত্রী নিয়ে লাহারহাটে চলছে স্পিডবোটগুলো। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা।


 


একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে বন্দর থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই ইজারাদার রাসেল চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ স্পিডবোটগুলো।


 


স্বাস্থ্যবিধি ও নজরদারি ছাড়াই সর্বাত্মক লকডাউনেও গাদাগাদি করে লাহারহাটে বেপরোয়া গতির স্পিডবোট চলাচল করেছে। ট্রলার-স্পিডবোটে সামাজিক দূরত্ব নেই, নেই লাইফ জ্যাকেটও। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী বহন করছে এসব নৌযান। কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।


 


লাহারহাট লঞ্চ ঘাটে থেকে ভোলার উদ্দেশ্য ট্রলারে যাত্রা করবেন আলমকে মাস্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখলে গরমে দম আট কাইয়া আসে। নিশ্বাস ছাড়তে পারি না। তাই মাস্ক পরি নামে মাত্র।


 


বরিশাল থেকে আসা আর ভোলাগামী যাত্রী সাব্বির বলেন, মোর বাসা ভোলায় বরিশালের কাউনিয়ায় আল-আমিন বেকারীতে কাজ করি। জরুরি কাজে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে যাইতাছি। দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পারাপার হয়ে থাকেন। কিন্তু একশ্রেণির অদক্ষ স্পিড বোট চালকদের হাতে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন উপায়ে যাত্রীদের হয়রানি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিড বোট বোঝাই করে যাত্রী পারাপার করেন।


 


এদিকে বিআইডব্লিউটিএ এর ঘাটে যাত্রীদের সুবিধার্থে সিটিজেন চার্ট বা ভাড়া নির্ধারিত তথ্য বোর্ড নেই। ইচ্ছানুযায়ী ঘাটের ইজারাদার রাসেল ভাড়া আদায় করে থাকেন। হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রিরা। তাদের অভিযোগ, বন্দর থানার কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।


 


লাহারহাট লঞ্চ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বরিশাল, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও ভোলায় যাতায়েত করে ৫ হাজারের বেশি যাত্রী। সরকারের নিয়মে এই ঘাটে প্রবেশ মূল্য দেয়া আছে তিন টাকা। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ ঘাটের ইজারাদাররা তাদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা আবার কখনও ১০ টাকা করে আদায় করছে। তার উপর কোনো টিকিটও দেয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে হতে হয় হয়রানীর শিকার।


 


লাহারহাট ঘাটে যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার রাসেল বলেন, সরকারি নিয়মেই তারা টাকা নিচ্ছে। যদিও টিকিটের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও অবৈধ স্পিডবোট চলাচল করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি স্পিডবোটঘাটের বিষয়ে কিছু জানিনা। এটা আমি নিয়ন্ত্রন করি না। আগের ইজারাদাররা স্পিডবোটঘাট নিয়ন্ত্রন করেন।


 


তাদের ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। তারা খুব প্রভাবশালী। আপনি ঘাটে এসে দেখেন। এখানে নৌপুলিশ, কোর্স গার্ডের লোক ডিউটিতে রয়েছে। তবে অসুস্থ রোগীদের সেবার জন্য কয়েকটি স্পিডবোট ভোলা ও হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ৬/৭ জন করে যাত্রী নিয়ে আমাদের ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। প্রতিটি বোডেই রোগী রয়েছে।


 


তিনি আরো বলেন কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতেই রোগীসহ ৬/৭ জন লোক নিয়ে বোর্ড গুলো ছাড়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ কঠোর লকডাউনের মধ্যে যেখানে নৌযান থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবন বন্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। সেখানে কিভাবে লাহারহাট ঘাটে অবৈধ স্পিডবোট গুলো প্রশাসনের চোখের সামনে থেকে একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে।


 


তারা আরো বলেন, কোস্টগার্ডকে ম্যানেজ করেই মনে হয় তারা চালিয়ে যাচ্ছে স্পিডবোট। স্থানীয় শরীফ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এই স্পিডবোটে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই যাত্রী নিয়ে করোনার মধ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্পিডবোট চলাচলের কারনে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে ধারনা করেন তিনি। তাই তিনি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন লকডাউনের মধ্যে স্পিডবোট গুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।


 


ভোলাগামী যাত্রীরা বরিশাল থেকে সড়কপথে লাহারহাট গিয়ে ফেরি কিংবা লঞ্চে না উঠে দ্রুত কালাবদর নদী পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য স্পিডবোটের যাত্রী হন। যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। ৪/৫ জন ধারণ ক্ষমতার স্পিডবোটে যাত্রী বহন করা হয় ১০/১২ জন। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে উত্তাল কালাবদর পাড়ি দেয়ার জন্য লক্কর-ঝক্কর স্পিডবোট চালানোর জন্য দক্ষ ড্রাইভার নেই।


 



এসব স্পিডবোটের চলাচলের অনুমতি নেই, বৈধ কাগজপত্র নেই। সরকারি দপ্তরের বিকল বাতিল পুরানো স্পিডবোট নিলামে ক্রয় করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে এ রমরমা ব্যবসা। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বরিশাল-ভোলা নৌরুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে এ স্পিডবোটগুলো। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটলে তা আপস নিষ্পত্তি হয়ে যায়।


 



এ রুটের স্পিডবোট দুর্ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি মারা গেলেও দোষী কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।


 


বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন , যদি কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে স্পিডবোট জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও যদি স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে তাকে ও আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি আমি দেখছি।


 


বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তফিজুর রহমান জানান, আমরা প্রমাণ পেলে অবশ্যই এ ব্যপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘাট কেন্সাল করা থেকে শুরু করে সব ধরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লকডাউনের মধ্যেও কিভাবে স্পীড বোড চলছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।