নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় শেষ খবর পর্যন্ত ৪৯ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তিন বাংলাদেশি নাগরিক| গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও আট বাংলাদেশিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি জানিয়েছে।হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এক নারীসহ চারজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের বরাতে এক হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে ২৮ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। হামলার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলাকারী লাইভ ভিডিও করেছে। হামলার দুইদিন আগেও তিনি হামলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। মুসলিমবিদ্বেষী এই যুবক বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) হামলার কথা জানিয়েছিল। হামলাকারী জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করেন। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছেন।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ এই হামলায় হামলাকারীর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ওই মসজিদে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা নামাজ পড়তে যেতে পারেন, আন্তর্জাতিকভাবে নজরে পড়তে ওই হামলাকারী বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওপরই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন বলে ধারণা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদের পৌছাতে পৌছাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটার দেরি হয়ে যায়। বাংলাদেশ দলের মসজিদে ঢোকার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যেতে যেতে ১টা ৪০ বেজে যায়। তাদের পৌছার আগেই হামলার ঘটনাটি ঘটে।
বাংলাদেশ দলের বাস যখন মসজিদের সামনে পৌছায়, এমন সময় রক্তাক্ত শরীরের একজন মহিলা ভেতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনো বুঝতে পারেননি ঘটনা কী। তাঁরা হয়তো মসজিদে ঢুকেই যেতেন, যদি না বাসের পাশের একটা গাড়ি থেকে এক ভদ্রমহিলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলতেন, ‘ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমরা ভেতরে ঢোকো না।’ ক্রিকেটাররা তখন বাসেই অবরুদ্ধ হয়ে আটকা পড়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। কারণ পুলিশ ততক্ষণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাসে বসেই তাঁরা দেখতে পান, মসজিদের সামনে অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। অনেকে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসছেন মসজিদ থেকে। যা দেখে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। কারণ বাসে কোনো নিরাপত্তাকর্মী দূরে থাক, স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিসারও ছিলেন না। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিরাপদেই ওই এলাকা থেকে সরে আসতে সমর্থ্য হয়।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদে যখন গোলাগুলি শুরু হয়, তার পরপরই সেখানে পৌঁছেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা৷ পরে তাঁরা সেখান থেকে দ্রুত সরে যান৷ বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে অনুশীলন করেন খেলোয়াড়রা৷ সেখান থেকে তাঁদের কয়েকজন মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন৷ তবে তারা নিরাপদেই হোটেলে ফিরে আসতে পেরেছেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।