করোনার নতুন ‘হটস্পট’ কেরানীগঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৩০শে এপ্রিল ২০২০ ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
করোনার নতুন ‘হটস্পট’ কেরানীগঞ্জ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরবর্তী ‘হটস্পট’ হতে যাচ্ছে কেরানীগঞ্জ। ২৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার পর্যন্ত এলাকাটিতে ১০৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। যা সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের চেয়ে বেশি। পুরান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সংযোগ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে করোনার দ্রুত সংক্রমণ ঘটছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসাইন জানান, মূলত তিনটি ইউনিয়নে পড়েছে করোনার থাবা। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুভাঢ্যায় ৩৫, জিনজিরায় ২৮ এবং আগানগরে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শাক্তায় ৮, কোন্ডায় ৬, কালিন্দীতে ৫, তেঘরিয়ায় ৩, কলাতিয়া এবং রুহিতপুরে একজন করে শনাক্ত করা হয়।

তিনি আরো জানান, এমন ছয়টি পরিবার রয়েছে, যেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিটি পরিবারে আট থেকে ১০ জন করে আক্রান্ত। একটি উপজেলায় এত বেশি আক্রান্তের তথ্য বিস্ময়কর। জনসংখ্যার বাড়তি চাপ এবং মানুষের অসচেতনতার কারণেই এমনটা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। সংক্রমিত এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে মানুষের অনেক জটলা। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এমতাবস্থায় কেরানীগঞ্জে শ্রমিকের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করেছেন। দিনের বেলায় পুলিশের প্রতিবন্ধকতা এড়াতে রাতেই বেশি মানুষ ঢুকছে। বেশিরভাগই কেরানীগঞ্জের স্থানীয় কারখানাগুলোতে কাজ করেন। এ বিষয়ে মীর মোবারক হোসাইন বলেন, পোশাক কারখানা পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে আগানগর ইউনিয়নে দিনে অন্তত এক লাখ মানুষের আনাগোনা হবে। সারাদেশের পাইকাররা এখানে ভিড় জমায়। ঈদের আগে ওই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সমকাল’র এই প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরানীগঞ্জে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৫ এপ্রিল। প্রথম ১০ দিনে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২৬ জন। পরের ১৩ দিনে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সব মিলিয়ে ২৩ দিনে ১০৩ জনকে শনাক্ত করা হয়। গত ১৫ এপ্রিল প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাণহারিয়েছেন পাঁচজন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আটজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দেবনাথ বলেন, কেরানীগঞ্জে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় আট লাখ। কিন্তু অস্থায়ী বা ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেশি। সর্বমোট প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। অধিকাংশেরই বসবাস শুভাঢ্যা, জিনজিরা ও আগানগরে। শুভাঢ্যায় বসবাসকারীর সংখ্যা প্রতিবেশী দোহার-নবাবগঞ্জ দুই উপজেলার চেয়েও বেশি।

ঘনবসতি করোনা সংক্রমণে ভুমিকা রেখেছে উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যবসা বা চাকরি করেন, এমন অনেক লোকজন থাকেন কেরানীগঞ্জে। আবার নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ভালো। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও মানুষের মধ্যে সামান্যতম সচেতনতা নেই। প্রতিদিনই রাস্তায় অভিযান চলছে। কিন্তু ঘুরেফিরে একই অবস্থা। এর মধ্যে আবার কারখানার কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন।