হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে রিয়াদ
ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে প্রায় ২৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে পুরোদমে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিনিয়োগ প্রস্তাবসহ অন্তত সাতটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ, আসবাবপত্র, বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন, কেমিক্যাল, সিমেন্ট খাত অন্যতম।
এদিকে তিনটি পৃথক প্রকল্পে আরামকো’র বিনিয়োগ, লালমনিরহাটে একটি বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ফ্যাসিলিটি তৈরি, চট্টগ্রাম ও বরিশাল রুটে দুটি রেল প্রকল্প এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খোলার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এই প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত সৌদি আরবের বেসরকারি খাতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। যখনই কোনও একটি প্রকল্পের প্রাথমিক আলোচনা শেষ হচ্ছে, তখনই আমরা ওই প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত মাসে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জেদ্দা বন্দর এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের দুটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে।’ উভয় ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য এখন বড় আকারে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
কৌশলগত প্রকল্প
প্রায় ২৫টি প্রকল্পের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রকল্প হচ্ছে লালমনিরহাটে একটি বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ফ্যাসিলিটি তৈরি করা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং সৌদি আল সালাম অ্যারো স্পেসের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিমান বাহিনীর প্রধান ইতোমধ্যে সৌদি আরব সফরও করেছেন। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প এবং প্রাক্কলিত বিনিয়োগ কয়েক বিলিয়ন ডলার।’
এটি শুধু বাংলাদেশের বিমান নয়, এই অঞ্চলের অন্য দেশের বিমানও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং এখানে বড় একটি বাজার আছে ধারনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবে অগ্রসর হওয়ার আগে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রয়োজন এবং এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
রেল প্রকল্প
বাংলাদেশে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের দুটি রেল প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সৌদি আরব।
প্রকল্পের বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এর একটি হচ্ছে ১৬শ’ কোটি ডলারের ঢাকা-চট্টগ্রাম- কক্সবাজার হাইস্পিড ট্রেন এবং আরেকটি হচ্ছে চারশ’ কোটি ডলারের ঢাকা-বরিশাল-পায়রা মিটারগেজ রেল লাইন প্রকল্প।’ প্রস্তাবদুটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
আরামকো’র বিনিয়োগ
সৌদি আরবের বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি আরামকো তিনটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ওই কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আরামকো এলএনজি ডিভিশন বাংলাদেশে একটি এলএনজি টার্মিনাল করতে চায় এবং আরামকো ট্রেডিং বাংলাদেশে এলপিজি বিক্রি করতে চায়। এছাড়াও আরামকো’র মূল কোম্পানি বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আরামকো এককভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সক্ষমতা রাখে এবং আমরা তাদের অনুরোধ করেছি তাদের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। আরামক ‘র প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল ইসলাম বিপুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং আমরা একটি ভালো চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী।’
ব্যাংকের ব্রাঞ্চ প্রতিষ্ঠা
বাংলাদেশের সোনালি ও এক্সিম ব্যাংক সৌদি আরবে ব্রাঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং এজন্য সরকারের অনুমোদন পেয়েছে তারা। এখন সৌদি আরবের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে ব্যাংক দুটি।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সৌদি আরবে প্রচুর বাংলাদেশি অবস্থান করেন। তাদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে অন্যান্য ব্যবসা করতে পারবে ব্যাংকগুলি।’
এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইন্সুরেন্স সুবিধা দেওয়ার জন্য জীবন বীমা করপোরেশন সৌদি আরবের অনুমতি চেয়েছে বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।