নৃশংসতার নথিভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: রবিবার ২রা মার্চ ২০২৫ ১০:১৬ অপরাহ্ন
নৃশংসতার নথিভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ: ড. ইউনূস

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতার সঠিক নথিভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের দমনপীড়ন, সাঈদীর রায়ের পর সহিংস দমন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা জরুরি। যদি এসব ঘটনার যথাযথ নথিভুক্তি না হয়, তাহলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।  


রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রকাশ করা সহজ কাজ ছিল না, তবে সময়মতো তারা তা করেছে।  


জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস জানান, ৫ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফোলকার তুর্ক জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে এ প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্রিফ করবেন। জাতিসংঘ এসব ঘটনার যথাযথ নথিভুক্তি এবং জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। এটি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ ও সত্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।  


ড. ইউনূস বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে যে অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জনগণের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের দলিল সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে।  


জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জনগণের অধিকার রক্ষা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ চালিয়ে যাবে। তারা আশা করে, ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নেবে।  


আবাসিক সমন্বয়কারী লুইস বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সংকট পুনরায় বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে আসবে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা কমে যাচ্ছে, যা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।  


তিনি জানান, প্রতি মাসে কেবল রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেই ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই সহায়তা কমে যাওয়ায় সংকট আরও গভীর হচ্ছে। জাতিসংঘ আশা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  


প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সফরকালে তিনি রোহিঙ্গা সংকট এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।