বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসের ক্লাস্টার শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) তাদের গবেষণায় পাঁচজনের শরীরে এই ভাইরাস সনাক্ত করেছে। সোমবার (৩ মার্চ) আইসিডিডিআরবি তাদের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে এ বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করে।
আইসিডিডিআরবি জানায়, তারা ২০২৩ সালে সংগৃহীত নমুনাগুলোর পর্যালোচনা করে এ তথ্য পেয়েছে। গবেষণায় ব্যবহৃত সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, বাংলাদেশের এই স্ট্রেইনটি এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আইসিডিডিআরবি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা এবং দীর্ঘ বর্ষাকাল এডিস মশার জন্য উপযুক্ত প্রজনন পরিবেশ তৈরি করে। এ কারণে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রবণতা রয়েছে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, এবং এবার নতুন করে জিকা ভাইরাসও শনাক্ত হলো।
জিকা ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়, ঠিক যেমন ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া। তবে, জিকা ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণত ডেঙ্গুর মতো হলেও, প্রায় আশি শতাংশ ক্ষেত্রে এটি ধরা পড়ে না। ভাইরাসটি শরীরে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শারীরিক তেমন বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয় না, কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে তাদের শিশুর মধ্যে মাইক্রোসেফালি এবং অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির সৃষ্টি হতে পারে।
১৯৪৭ সালে উগান্ডায় বানরের শরীরে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং ১৯৫২ সালে এটি মানবদেহে পাওয়া যায়। এরপর এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে ২০১৫-২০১৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকায় একটি বড় আকারে মহামারী হিসেবে প্রকটিত হয়। এখন বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।