আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কিছুদিন আগে দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন ঘটেছে। সেখানে দেশের বাজারে তেলের দাম কমবে কবে সে নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এক দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৭৬.১০ ডলারে নেমে এসেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দাম সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যম দিয়ে টানা দু’সপ্তাহ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলো। এক মাসে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।
চলতি বছর দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ায় অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৪ ডলার ছাড়িয়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে দাম কমায়নি মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ তেলের দাম সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারমূল্য লিটারপ্রতি ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপি ছিল। বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৪১ টাকা কম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক শূন্য ১ টাকা কমে বিক্রি করছে। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে লিটারপ্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি। অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান দামে সরবরাহ করায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার সমালোচনা করা হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া বাড়ানোরও সমালোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে দাম বাড়ার পরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার প্রবণতা দেখা দেয়। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমে। গত সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৭৬ দশমিক ১০ ডলারে নেমে গেছে। অবশ্য বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এখনও ৫৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলও গত সপ্তাহ বড় দরপতনের মধ্যে পড়ে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৩ দশমিক ৪৩ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৪৫ ডলার। এতে গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম এখনও ৫১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে গত এক সপ্তাহে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে প্রতি গ্যালন হান্টিং অয়েলের দাম ২ দশমিক ২৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে হান্টিং অয়েলের দাম কমেছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে বছরের ব্যবধানে হান্টিং অয়েলের দাম এখনও ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।