অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ২৮শে মে ২০২২ ০৬:১৫ অপরাহ্ন
অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার

দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে বোর মৌসুমে চার দিনের ব্যবধানে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। খুচরা বাজারে হু হু করে বাড়ছে দাম। চারদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরে বিভিন্ন জাতের চালের দাম কেজিতে ৭-১০ টাকা করে বেড়েছে। 


এদিকে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অটোমিল মালিকরা চাল মজুত রেখে বিক্রি বন্ধ করে দাম বাড়িয়েছেন।


শনিবার (২৮ মে) হিলি বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। চারদিন আগে মিনিকেট চাল ৫৩ থেকে ৫৫ থেকে টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শম্পাকাটারি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হলেও, এখন তা ৬৪-৬৫ টাকা, আঠাশ জাতের চাল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হলেও তা বেড়ে ৫২-৫৪ টাকা ও স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৩৮-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 


বোর মৌসুমেও হঠাৎ দাম বাড়ার পেছনে চালের অটোমিল মালিকদের কারসাজি এবং ভারতীয় চালের আমদানি বন্ধ থাকার কথা বলছেন খুচরা বিক্রেতারা।


হিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী (ডিলার)  বাবুল হোসেন বলেন, প্রতিবছর এমন সময় চালের দাম কম থাকে। তবে এবার ব্যতিক্রম, দাম বাড়ছে। এর কারণ হলো ধানের দাম বেড়েছে। যে ধান হাজার টাকার নিচে ছিল, সেই ধান বর্তমানে ১১০০ থেকে ১১২০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে এতেও দাম খুব বাড়তো না। আবহাওয়া খারাপের কারণে শ্রমিক সংকটে স্থানীয় হাসকিং মিলগুলো চাল উৎপাদন করতে পারছে না। এই সুযোগে চালের অটোমিল মালিকরা বেশি পরিমাণে ধান কিনে চাল করে সব মজুত করছেন। পাশাপাশি বিক্রিও কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দাম অনেক বেশি বেড়েছে।  

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জাতের চাল কেজিতে ৭-১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে চাল চাইলেই মিল মালিকরা বলছেন- চাল নেই। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। আমরা যে চাল কোথাও থেকে কিনবো, তারও উপায় নেই। এর ওপর ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ, যে কারণে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে চাল কেনা-বেচা করতে হচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ভারত থেকে চাল আমদানিসহ অসাধু মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।  

আরেক চাল বিক্রেতা অনুপ কুমার বসাক বলেন, চালের দাম চার থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৬-৭ টাকা করে বেড়েছে। এর কারণ হলো লোকাল চাল মিলগুলো সব বন্ধ। যে কারণে এখন অটোমিল মালিকরা যা চাইছে, তাই হচ্ছে। ভরা মৌসুমে যদি চালের দাম বাড়ে, তাহলে বাকি দিনগুলোতে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। সমস্যা সমাধানে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।  


হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশা চালক এমদাদ হোসেন বলেন, আমি রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালাই। সারাদিন রিকশা চালিয়ে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় হয়। কিন্তু যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে চাল কিনতেই সব শেষ। সংসারের বাকি খরচ কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যে চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল, তা বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। আমাদের মতো মানুষের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। সরকার কিভাবে দাম কমাবে কমাক, না হলে গরিব মানুষদের মুখে ভাত উঠবে না।

 

হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা রাজা মিয়া বলেন, এখন নতুন ধান উঠেছে। এই সময়ে চালের দাম কম থাকার কথা, কিন্তু হয়েছে উল্টো। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চালের বাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।


হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বলেন, হিলি দিয়ে মোটা চাল আসতো, তা এখন আমদানি হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বাসমতি চাল আসে। চলতি মাসে এক ট্রাকে ৩৫ টন ও গত মাসে এক ট্রাকে ৩২ টন বাসমতি চাল এসেছে। গত অর্থবছরে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় বন্দর দিয়ে বেশ পরিমাণে চাল এসেছে বলে জানান তিনি।   


এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, বাজারে অহেতুক কেউ যেন কোনও পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করছি। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।