চলতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে শীতকালীন সবজির চাহিদা শেষ হওয়ায় কাঁচাবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এ সময়ে বাজারে দেখা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ সবজি ৬০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে করলা, বেগুন, কাঁকরোল, পেঁপে ও টমেটো বিক্রির দাম বেশ চড়া হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির পূর্ণ সরবরাহ না আসায় বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে, তবে তাদের দাবি, সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, যেমন কারওয়ান বাজার, খিলক্ষেত বাজার ও যাত্রাবাড়ী বাজারে এ চিত্র স্পষ্ট। এক বাজার বিক্রেতা রসুল জানান, এখনও গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ পুরোপুরি শুরু হয়নি, তাই কিছু কিছু সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, শাক-সবজির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। পেঁপে ও গাজরের দাম বিশেষভাবে বেড়েছে, যা বাজারে অনেক ক্রেতার জন্য অস্বস্তির সৃষ্টি করছে। খিলক্ষেত বাজারের এক বিক্রেতা আনিস বলেন, প্রতিবছরই এই সময়ে পেঁপে ও অন্যান্য শাকসবজির দাম বাড়ে, কিন্তু এবছর দাম বাড়ার গতি একটু বেশি হয়েছে।
এছাড়াও, মরিচ, ধনেপাতা ও মুরগির দাম বাড়ানো নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের খাদ্য বাজেটে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মুরগির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা করিম জানান, খামারিদের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে মুরগির দাম বেড়েছে, ফলে ব্রয়লার মুরগি ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুরগির বাজারে কেজি প্রতি দাম ১০-৩০ টাকা বেড়ে ১৮০-২৮০ টাকায় পৌঁছেছে।
পেঁয়াজের দামও সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছু ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন সামনে আরও বাড়তে পারে। সাথেই বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল থাকলেও, আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে, বিশেষ করে আমদানি করা রসুনের দাম ১৮০-২২০ টাকায় পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি ভোক্তাদের জন্য নতুন করে আরও অস্বস্তির সৃষ্টি করছে।
এমনকি, মাছের বাজারেও কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবে রুই, কাতল ও চাষের শিং মাছের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, রুই ও কাতল মাছের দাম ৩৫০-৪৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা কিছু ক্রেতার জন্য ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। তবে, মাছের বাজারে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কিছুটা স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই সব বাজারের পরিস্থিতি সবকিছু মিলে ভোক্তাদের জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। এক ক্রেতা ফিরোজ জানান, ব্যবসায়ীরা মুনাফা বাড়ানোর জন্য এভাবে দাম বাড়াচ্ছেন, এতে পকেট কাটছে সাধারণ মানুষের। তার মতে, যেন আবার সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে কাঁচাবাজার। এ অবস্থায় ভোক্তাদের জন্য জীবনযাত্রা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি, ডিমের দামও আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়ে ১২০-১৩০ টাকা হয়েছে, যা অনেকের কাছে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। দেশি মুরগির ডিমের দাম আরও বেশি, যা ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বাজারের অস্থিরতা মেটাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন, যাতে সিন্ডিকেটের মতো ব্যবসায়িক কৌশলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো যায়। সরকারের উচিত দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষকে যেন অস্বস্তিতে পড়তে না হয় এবং তাদের খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয়।