প্রকাশ: ২ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৮
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি নামক ভাইরাসজনিত রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে ছোট বাছুরদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ভাইরাসটি মশা-মাছির মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামীণ এলাকায় খামারিরা পড়েছেন গভীর উদ্বেগে।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এলএসডি রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে এ রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
মঙ্গলবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে সরজমিনে দেখা যায়, ছোট ভাগলপুর গ্রামের সালমা নামের এক নারী তার বাছুরকে হাসপাতালে আনছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২০ দিন ধরে বাছুরটির শরীরে গুটি উঠেছে এবং গত কয়েক দিনে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
উজানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধাও তার গরুর আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার একটি বড় গরুর পা ফুলে যাওয়ার পর চিকিৎসক এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং নিশ্চিত করেন যে এটি এলএসডি-তে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু তার গ্রামেই এক সপ্তাহে তিনজন খামারির গরু মারা গেছে বলে জানান তিনি।
মজলিশপুর চর গ্রামের কৃষক মোবারক খাঁ বলেন, রাতে সুস্থ গরু রেখে সকালে দেখেন গরুর চামড়ায় গুটি, পরে ফোসকা, এরপর জ্বর ও দুর্বলতা দেখা দেয় এবং শেষপর্যন্ত গরুটি মারা যায়। তার মতে, এই রোগ খুব দ্রুত গরুর দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি করে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, এলএসডি একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। সরকারি পর্যায়ে এর কোনো ভ্যাকসিন নেই, তবে কিছু বেসরকারি ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া গেলেও তা ব্যয়বহুল। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছোট বাছুরদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টিকর খাদ্য, ভিটামিন ও নিমপাতার পানির ব্যবহার—এসব পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গোয়ালন্দে এলএসডি পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। পশুসম্পদ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সুলভ ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার মতো ব্যবস্থা না থাকলে কৃষি ও খামার অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।